সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির চেয়ে বড় সমাবেশের চেষ্টায় আ.লীগ
বিএনপির সমাবেশের এক সপ্তাহের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শক্তি দেখাতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত রবিবারের সমাবেশকে যত লোক হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি জনসমাগম দেখিযে ক্ষমতাসীনদের প্রতি মানুষদের সমর্থনের প্রমাণ দেখাতে চায় সরকার দল।
বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐহিত্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় এই সমাবেশের আয়োজন করেছে ক্ষমতাসীন দল। অবশ্য দলের ব্যানারের জনসভার বদলে নাম দেয়া হয়েছে নাগরিক সমাবেশ। যদিও দলীয় সমাবেশের মতোই এখানেও মধ্যমণি হিসেবে থাকছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
এই নাগরিক সমাবেশের ঘোষণা এসেছে অবশ্য বিএনপির সমাবেশের ঘোষণার আগেই। কিন্তু এই সমাবেশের এক সপ্তাহ আগে বিএনপির বড় ধরনের সমাবেশ হয়ে যাওয়ায় এই সমাবেশটিকে ঘিরে বাড়তি আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যদিও একে বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হিসেবে দেখতে নারাজ। তবে এই সমাবেশে যত সম্ভব বেশি লোক সমাগমের চেষ্টা তার কথাতেই উঠে এসেছে। শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের জনসভায় যেমন দল মত নির্বিশেষে লোক অংশ নিয়েছিল, তেমনি শনিবারের সমাবেশেও দল মত নির্বিশেষে মানুষ অংশ নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমিরেটাস আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরীন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্রিস কালদুল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সমবেত সংগীতের পর শুরু হবে একক সংগীত। কিরণ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী চন্দনা মজুমদার লোক গাইবেন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় থাকবেন অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী।
বেলা আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশ আয়োজনে নাগরিক কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর নাগরিক কমিটির সহায়ক শক্তি হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিচ্ছে। নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
সমাবেশের কার্যক্রম সমন্বয় করার জন্য নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, হারুন-অর-রশিদ ও অসীম কুমার উকিল।
এজন্য দলের পক্ষ থেকে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম অঙ্গসংগঠন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাদের সাথে যৌথসভা করেছে আওয়ামী লীগ। এ সভায় সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে দলটির নেতারা।
সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আলাদা আলাদাভাবে যৌথসভা করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ। নগর নেতারা বিভিন্ন থানা শাখা্য়ও বর্ধিত সভা করছে। এছাড়াও যৌথসভা করছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ।
কয়েক বছর পর এবারই এ নাগরিক সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে মাইকিং করা হচ্ছে। এ মাইকিংয়ে যেমনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা হচ্ছে, আবার ভাষণের স্বীকৃতির কারণে যে নাগরিক সমাবেশ করা হচ্ছে তাতে যোগ দিতে নগরবাসীকে আহ্বান করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। এখানে আলোচনা ছাড়াও সমাবেশে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। কবি নির্মলেন্দু গুণ ছাড়াও সেখানে আবৃত্তি করবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য, অর্জন ও সাধিত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে জাতির উদ্দেশে নির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন।
গত তিন চারদিন ধরে নাগরিক সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বপাশে পশ্চিমমুখী করে নৌকার আকৃতিতে নাগরিক সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরেই দফায় দফায় মঞ্চ নির্মাণের অগ্রগতি পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মঞ্চস্থল পরিদর্শনে আসেন। তিনি সেখানে নাগরিক সমাবেশে উপস্থিতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৭ মার্চ কেবল আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল না। তেমনি কালকের সমাবেশেও সবাই আসবে। এ নাগরিক সমাবেশ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আমরা আশা করছি। চারদিকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। দল-মত নির্বিশেষে জনতার বিস্ফোরণ ঘটবে কালকের সমাবেশে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নাগরিক সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত হবেন। আয়োজনের সভ প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ বলেন, বলেন, ‘আমাদের দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী যারা আছেন তারা এবং সাংবাদিক সবাই আসবেন। এই ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষও আসেন। এটা একটা বিরল গৌরব, সম্মান ও অর্জন। জাতীয় সম্পদ তো বটেই এটা এখন আন্তর্জাতিক সম্পদ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন