স্বাধীনতার পর এই প্রথম মন্ত্রীত্ব শুন্য লালমনিরহাট

স্বাধীনতা ও তৎপরবর্তী দীর্ঘ সময় পর মন্ত্রীত্ব থেকে বঞ্চিত হলো ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাট। নৌকার জয় জয়কার অবস্থায়ও মন্ত্রীত্ব পেলেন না কেউ।

গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) শপথ নিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদে গঠিত সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা।

জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট রাজনৈতিক ভাবে বেশ আলোচিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মতই রাজনৈতিক অঙ্গনে লালমনিরহাটের ইতিহাস বেশ ঐতিহ্য ও গৌরবের। সেই গুরুত্ব বিবেচনায় স্বাধীনতার পরবর্তী বেশ কিছু সময় মন্ত্রী পরিষদে স্থান হয়েছিল এ জেলার জনপ্রতিনিধি বা নাগরিকের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাটের ৩টি আসনেই ক্ষমতাসিন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা পাটগ্রাম) আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী কালীগঞ্জ) আসনে সদ্য সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহন করেছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার জয়জয়কার অবস্থার পুরুস্কার স্বরুপ ভাল মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পাবেন এ জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। জেলাবাসীর এমন প্রত্যাশা পুরন হয়নি। বরংচ কোন মন্ত্রী না দেয়ায় বেশ হতাশ জেলাবাসী।

স্বাধীনতার পরবর্তী এইচ এম এরশাদ আমলে লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা ১৯৮১ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শ্রম ও শিল্পকল্যাণমন্ত্রী এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ৮২ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কৃষি শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ৪র্থ সংসদরের ডেপুটি স্পিকারও (১৯৮৮-৯১) ছিলেন।

লালমনিরহাট জেলার নাগরিক আব্দুস সাত্তার নারায়নগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৫ সালের ৪জুলাই থেকে ৮৬ সালের ৯জুলাই পর্যন্ত পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং ১৯৮৬ সালের ৯জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রম ও জনশক্তিমন্ত্রী ছিলেন। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দা ভাষা সৈনিক ডা. শাফিয়া খাতুন ১৯৮৩ সালে এইচএম এরশাদ শাসন আমলে সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ছিলেন।

এরপর জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে শুন্য থাকলেও পরবর্তীতে ৮ম জাতীয় সংসদের বিএনপি জামায়াত জোট সরকার আমলে লালমনিরহাট-৩ আসনে নির্বাচিত আসাদুল হাবিব দুলু ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী (২০০১-২০০৬)। একই সরকার আমলের বিরোধী দলীয় হুইপ (২০০১-২০০৬) ছিলেন লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন।

এর ধারাবাহিকতায় নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামীলীগের সরকার আমলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন (২০০৯-২০১৪)। একই সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী(২০০৯-২০১১) এবং পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রী (২০১১-২০১৪) ছিলেন মহাজোটের প্রার্থী লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের গোলাম মোহাম্মদ কাদের। একই সরকার আমলে একাদশ জাতীয় সংসদে খাদ্য ও পরবর্তী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর (২০১৫-২০১৮) দায়িত্ব পান লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা ছিলেন লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের গোলাম মোহাম্মদ কাদের। একাদশ জাতীয় সংসদে পদন্নতি পেয়ে লালমনিরহাট-২ আসনের নুরুজ্জামান আহমেদ সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর(২০১৯-২০২৪) দায়িত্ব পান।

দীর্ঘ দিনের ধারাবাহিকতার ছন্দপতন ঘটল দ্বাদশ জাতীয় সংসদে গঠিত সরকারের মন্ত্রী পরিষদে। এই প্রথম মন্ত্রীত্ব বা সংসদের গুরুত্বপুর্ন কোন পদ থেকে বঞ্চিত হলেন লালমনিরহাটের জনপ্রতিনিধিরা।

লালমনিরহাট উন্নয়ন পরিষদ সদস্য হেলাল হোসেন কবির বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটির সরকারে এ জেলায় মন্ত্রী ছিলেন। কিছু উন্নয়ন হলে আরও বেশ কিছু উন্নয়নের জন্য দ্বাদশ সংসদেও মন্ত্রীর প্রয়োজন ছিল। তিস্তা মহাপরিকল্পনা, বিমানবন্দর, মোগলহাট স্থলবন্দর চালুসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের জন্য মন্ত্রীর দরকার ছিল জেলায়। স্বাধিনতার পরবর্তী ধারাবাহিকতার ছন্দপতনে হতাশ জেলাবাসী।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান সুজন বলেন, জেলায় অর্থনৈতিক জোনসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের জন্য মন্ত্রী প্রয়োজন এ জেলায়। আমরা আশাবাদি ছিলাম সদর আসনে দীর্ঘ দিন মন্ত্রীত্ব শুন্য ছিল। প্রথমবারের মত এ আসনে নৌকা পেয়ে জনগন বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করেছে। সেদিক থেকে পুরুস্কার স্বরুপ এ আসনে মন্ত্রী পাব আমরা। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নিরাশ করবেন না।