হজ ব্যবস্থাপনায় শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা
হজ ব্যবস্থাপনায় শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন পর্যন্ত বেশকিছু এজেন্সি হজযাত্রীদের জন্য বিমানের টিকিট সংগ্রহ করেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার হজযাত্রীর টিকিট সংগ্রহ বাকি রয়েছে। এ বিষয়ে (সোমবার) সকাল থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান ৫৬ এজেন্সি মালিককে ডেকে দেনদরবার করেন। সেখানে ধর্ম সচিব পরিষ্কার বলে দিয়েছেন প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য বিমানের টিকিট সংগ্রহ করতে। এর বিপরীতে নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন এসব এজেন্সি মালিকরাও।
তাদের বক্তব্য সরকার নির্ধারিত ৪ শতাংশ টিকিট রিপ্লেসমেন্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম সচিব মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, হজ এজেন্সিগুলোর হাত থেকে হজযাত্রীদের নিরাপদ করতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা বাড়ানোর সুযোগ নেই। হজ নীতিমালা অনুসারে শুধুমাত্র মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতাজনিত কারণ ছাড়া অতিরিক্ত রিপ্লেসমেন্ট করার সুযোগ নেই।
কিন্তু হজ এজেন্সিগুলো এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৪ শতাংশের স্থলে পূর্বের ন্যায় ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের দাবি করে আসছে। এ অজুহাতে হজ এজেন্সিগুলো হাজীদের জন্য বিমানের টিকিট গ্রহণ নিশ্চিত করছেন না। ফলে হজ ব্যবস্থাপনায় শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দেশের আরও ৮৮ হজ এজেন্সি মালিকদের নিয়ে মিটিং করতে দেখা গেছে। সেখানে ধর্ম সচিব তাদের আগে টিকিট নিশ্চিত করে তারপর সৌদিতে বাড়ি ভাড়া নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু হজ এজেন্সি মালিকদের বক্তব্য- তারা আগে বাড়ি ভাড়া করে এসে তারপর টিকিট নিশ্চিত করবে। আর এতে করে হজযাত্রীর সংখ্যার চেয়ে কম পরিমাণ বাড়ি ভাড়ার আশঙ্কা থেকে যায় বলে দাবি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের।
এজেন্সিগুলো এতো বেশি রিপ্লেসমেন্ট চাচ্ছে কেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেন তাসনিম বলেন, সরকার হজে যেতে আগ্রহীদের মোট সংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দিয়েছে। এটা খুবই কম। কারণ মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতা ছাড়াও অনেকে হজের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে হজে যেতে চান না। তাদের বিষয়ে আমরা রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ পাচ্ছি না। এটা আমাদের জন্য বেকায়দা সৃষ্টি করেছে। এজন্য হজ এজেন্সিগুলো দাবি করেছে এটা বাড়ানোর জন্য।
সরকারের সাথে রিপ্লেসমেন্টের বিষয়ে এমন দর কষাকষির মধ্যে প্রকৃত হজযাত্রীরা হজে যেতে বেকায়দায় পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন- না, এ ধরনের সসম্যা হওয়ার কথা নয়। যারা শুধুমাত্র যেতে চাচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রে আমরা রিপ্লেসমেন্ট চাচ্ছি। আমরা মনে করি সরকার এ যৌক্তিক বিষয়টি বিবেচনা করবে।
এ ধরনের রিপ্লেসমেন্ট বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে ধর্ম সচিব মুঠোফোনে বলেন, হজ নীতিমালায় উল্লেখিত ৪ শতাংশের অতিরিক্ত রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ নেই। এটা নিয়ে আমরা দফায় দফায় তাদের (হজ এজেন্সি মালিক) সাথে বসছি। আশা করি এর ভালো একটা সমাধান হবে এবং হজযাত্রীদের কোনো ধরনের বিড়ম্বনা থাকবে না।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু অসুস্থতা ও মৃত্যুজনিত কারণে এজেন্সি প্রতি মোট হাজির ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেয়ার নিয়ম থাকলেও এজেন্সিগুলো সেই কোটা পূর্ণ করে তা আরও বাড়িয়ে চায়। অন্যের পাসপোর্ট ও আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে রাখা অনেক হজযাত্রীকে এজেন্সিগুলো সে স্থলে নতুন হজযাত্রীর রিপ্লেস চায়, যা হজ নীতিতে বন্ধ করা হয়েছে। ফলে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। রিপ্লেসমেন্টের পরিমাণ না বাড়ানো পর্যন্ত এজেন্সিগুলো টিকিট কাটছে না। ফলে বেশকিছু ফ্লাইট বাতিল ও হজযাত্রী না যেতে পারার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
তবে শুরু থেকেই টিকিট কাটার সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত বাড়িভাড়া করার নির্দেশনা দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, যে পরিমান টিকিট কাটা হবে সেই পরিমাণ বাড়ি ভাড়া যেন নিশ্চিত করা হয়, সেজন্য আমরা হজ এজেন্সিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি এবং তা তদারকি করছি। কিন্তু হজ এজেন্সিগুলো আগে বাড়ি ভাড়া তারপর টিকিট কাটছে। ফলে টিকিট কাটা হজযাত্রীর চেয়ে কম সংখ্যক বাড়ি ভাড়া হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এজন্য শেষ মুহূর্তে হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ও ২৭ তারিখে বেশকিছু টিকিট কাটা হয়েছে। তবে এখনো প্রায় ৭ হাজারের মতো টিকিট কাটা বাকি রয়েছে। তবে টিকিট কাটা নয়, বরং বাড়ি ভাড়া করাকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে মন্ত্রণালয়।-পরিবর্তন ডটকম
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন