‘হাসিনা আন্টি, আমি বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই’

তিন বছর আগে গুম হয়ে যাওয়া পারভেজ হোসেনের ছোট্ট মেয়ে হৃদি কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, ‘হাসিনা আন্টি, আমি বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই! প্লিজ, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন!’ ওর কান্নায় পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে যায়। ভিজে ওঠে উপস্থিত সবার চোখ।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় নিজেদের দুঃসহ কষ্টের কথা তুলে ধরেন গুম হয়ে যাওয়া মানুষের পরিবারের সদস্যরা। ‘মায়ের ডাক: ঈদের আগে গুম হওয়া সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন’—ব্যানারে গুম হওয়া ২৯টি পরিবারের সদস্যরা এক হয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া মানুষদের ফিরিয়ে দিতে ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলেন, দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামী ডিসেম্বর থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। অনুষ্ঠানজুড়ে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা কাঁদতে থাকেন। একটি শোক বিহ্বল পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে।

গুম হওয়া এসব মানুষকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুল আহ্বান জানান নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের এ কান্না, এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন।’

২০১১ সালে নিখোঁজ হন কে এম শামীম আখতার। তাঁর স্ত্রী ঝরনা খানম বলেন, আর এক মাস পরেই শামীমের নিখোঁজের ছয় বছর হবে। বিচার তো দূরের কথা, এখনো সন্ধানই পাওয়া গেল না। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। তিনি সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষী ছিলেন কাজী মতিন। কাজী মতিনের ছেলে কাজী রকিবুল হাসান শাওন নিখোঁজ হন ২০১৪ সালে। শাওন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কাজী মতিন বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষী ছিলাম। চৌকস সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলাম। আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমন কেউ নেই, যাঁর কাছে যাইনি। সবার দ্বারে ঘুরেছি। এখন আমার হতাশ লাগে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক প্রমুখ।

নাসির উদ্দিন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন গুম বলে কোনো শব্দ নেই। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দলের সাধারণ মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার কি কখনো বাধা দিয়েছে?

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিরা যত দিন ফিরে না আসবে, তত দিন মনে করব প্রধানমন্ত্রীর কানে এ কান্না যাচ্ছে না।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন তিনি রাখেন, ‘আপনি গুম হতে রাজি আছেন?’

শিরীন হক বলেন, ‘আমরা সবাই অসহায় হয়ে গেছি। আমরা কার কাছে যাব? আমাদের কারও কাছে যাওয়ার জায়গা নেই।’

এ সময় নূর খান লিটন বলেন, ‘সরকার যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা কি অন্ধ, না বধির? তারা কি কিছু দেখতে পান না?’