‘হিরোকে যে জাতি স্বীকৃতি দিতে পারে না, সে জাতি হিরো তৈরি করতে পারে না’

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করছে। সে ক্ষেত্রে তাদের অনেক আত্মত্যাগ করতে হচ্ছে। এমনকি জীবনও উৎসর্গ করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘শান্তির সময়ে পুলিশ যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। এ যুদ্ধ অশান্তির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের শান্তি, নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। আমরা ২৪ ঘণ্টা এ যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। আমরা যেহেতু প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করছি, সেজন্য আমরা প্রতিবছর আত্মত্যাগও করছি।’

পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় তিনি এ কথা বলেন।

২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণের মধ্য দিয়ে আজ পালিত হয়েছে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২২’।

আইজিপি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উদযাপিত হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় আজ আবার একত্রিত হয়েছি আমরা। ২০২১ সালে আমরা ৩৪৬ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি, এরমধ্যে ১৩৮ জনকে কর্তব্যরত অবস্থায় হারিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘হিরোকে যে জাতি স্বীকৃতি দিতে পারে না, সে জাতি হিরো তৈরি করতে পারে না।’ বাঙালিকে বীরের জাতি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা প্রমাণ করেছি জাতিগত বীরেরা কী করতে পারে। যখনই সুযোগ পেয়েছে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে আমরা হিরো।’

কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করে আইজিপি বলেন, ‘তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা, পরিবারের জন্য সববেদনা এ দুই লাইন পর্যাপ্ত নয়। আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারিয়েছি, প্রিয় মুখকে হারিয়েছে পরিবার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি হুমকির মুখে। এর বিরাট একটা অনুরণন রয়েছে। সেই পরিবারটিকে ঘুরে দাঁড়াতে আরও ২০ বছর লাগে। সেই পরিবারটিকে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা তারাই বুঝে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ মহিমান্বিত দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বিপন্ন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

আইজিপি বলেন, ‘যেহেতু আমরা সব সময় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে থাকি, প্রফেশনাল সেফটি নিশ্চিতেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকায় একটি ডিভিশনাল হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে।’

পুলিশের কাজের পরিধি উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, বলা হয়ে থাকে জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেটি পুলিশি দায়িত্বের বাইরে পড়ে। তিনি পুলিশের নিজ দায়িত্বের বাইরে ‘ডেভেলপমেন্ট পুলিশিং’ কনসেপ্ট নিয়ে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করা যায় বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানান। এসময় একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।