১০ ডিসেম্বর বিএনপির ১০ দফা ঘোষণায় যা থাকছে
আগামী শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। যদিও সমাবেশস্থল এখনও নির্ধারণ হয়নি। ওই সমাবেশ থেকে ঘোষণা হবে নতুন কর্মসূচি। নেতাকর্মীদের দেয়া হবে ‘বিশেষ বার্তা’।
প্রস্তুত করা হচ্ছে ‘সরকার পতন’— এক দফা যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা। এই এক দফার আলোকে তৈরি করা হয়েছে ‘১০ দফা’ দাবির খসড়া। শনিবার ঢাকার সমাবেশ থেকে এই ১০ দফা ঘোষণা করবে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
দেশ গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ আলোকে রাষ্ট্রসংস্কারের খসড়া প্রণয়ন করেছেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
দলীয় সূত্রমতে, সরকার হটাতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপে সংলাপে যেসব প্রস্তাব তার মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে ১০ দফা। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী দর্শনকে প্রধান্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ২৭ দফা রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। চলছে কাটছাঁট। এই রূপরেখা চূড়ান্ত করার কাজে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পেশাজীবী নেতারা। এমনকি ঢাকার গণসমাবেশেও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত থাকতে পারে। যদিও এখনও বিএনপির পক্ষ থেকে দাওয়াত কার্ড পায়নি বলে জানিয়েছেন সমমনা দলগুলো। এদিন ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকারকে ‘লাল কার্ড’ দেখানো হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে আন্দোলনে যাবে বিএনপি।
১০ দফা দাবি আদায়ে সরকারকে ‘টাইম-ফ্রেম’ বেঁধে দেয়া হবেও বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, “যুগপৎ আন্দোলনের ‘ফরমেট’ দাঁড় করাতে সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বহুদিন ধরে আলাপ-আলোচনা করছি। দুই ধাপের সংলাপের পর এটা এখন দৃশ্যমান। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরা সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আগামীতে সরকার পতনের এক দফা লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ কর্মসূচি আরও কঠোর হতে পারে।’
সূত্র জানায়, বিএনপির ১০ দফার মধ্যে রয়েছে— গণআন্দোলনের ১০ দফার খসড়ায় সংসদ বিলুপ্ত করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ; ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; বর্তমান কমিশন বিলুপ্ত করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন; খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আলেমদের সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন মামলায় গ্রেফতার বন্ধ ও সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি না করা; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবার সব খাতে দর বাড়ানোর গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল; নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও পুঁজিবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কমিশন গঠন; গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী; প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের দাবি— ঢাকার সমাবেশ হবে শুধুই বিভাগীয় সমাবেশ। আগের ৯ বিভাগীয় সমাবেশের মতোই ঢাকার সমাবেশ হলো শান্তিপূর্ণ। এরমধ্য দিয়ে সারাদেশে মানুষের সমর্থন কোন পর্যায়ে এবং মাঠের নেতাকর্মীদের অবস্থানও জানা গেছে। বিভাগীয় শেষ সমাবেশ হিসেবে এদিন ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। তাদের লক্ষ্য ঢাকার সমাবেশের পর দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে যাওয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নতুনভাবে রাষ্ট্র সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। দাবি চূড়ান্ত করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনের কার্যকর দিকনির্দেশনা পাবেন তারা। এরই মধ্যে কয়েকটি দফাকে আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে মূলত যুগপৎ আন্দোলনে যেতে রাজি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হবে।’
জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপির বেশিরভাগ দাবি সঙ্গে আমরা একমত। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় করেছি।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশে এখনও বিএনপির তরফ থেকে আমাদের কোনো কিছু জানান হয়নি। সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য কোনো দাওয়াত কার্ড পাঠায়নি বিএনপি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের রূপটা পরিবর্তন হবে। তবে সেটা শান্তিপূর্ণভাবে। মহাসচিব ঘোষণা করবেন কী রূপে হবে আন্দোলন। এখন আমরা জাতীয়ভাবে কী কর্মসূচি দেব, সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। তবে ওই দিন যুগপৎ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।’
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আমাদের সমাবেশ হবে আগের ৯ সমাবেশের মতোই শান্তিপূর্ণ। তবে ১০ দফা এদিন ঘোষণা করা হবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ হরতাল বা অবরোধের মতো হার্ডলাইন কমসূচি দেয়া হবে না বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন