টিপু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

১৫ লাখ টাকার বাজেটে দুবাই থেকে কিলিং মিশন পরিচালনা

বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর আ.লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

এ হত্যার সঙ্গে জড়িত মাস্টারমাইন্ডসহ গ্রেফতার চারজন জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে মতিঝিলে যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যার প্রতিশোধ নিতেই টিপুকে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা মিল্কীর সহযোগী ছিলেন।

পরিকল্পনাকারীরা আরও জানায়, টিপুকে হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট করেন তারা।
আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন মুসার তত্ত্বাবধানে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। দুবাই থেকে এ কিলিং মিশন পরিচালনা করেন তিনি।

শনিবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

টিপু হত্যাকাণ্ডের গ্রেফতার ৪ আসামি হলেন – ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার (৩৮), নাছির উদ্দিন (৩৮) ও মোরশেদুল আলম (৫১)।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তাদের তারা জানায়, টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মুসার সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও অর্থ লেনদেন করেন তিনি।

গ্রেফতারকৃতরা জানায়, টিপু হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। টিপুর সহযোগী রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের আসামিদের মধ্যে ওমর ফারুক ৯ লাখ টাকা যোগান দেন। বাকি টাকা মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ এবং মুসা প্রদান করে। দুবাইয়ে যাওয়ার সময় মুসা ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায় এবং হুন্ডির মাধ্যমে মুসাকে আরও ৪ লাখ টাকা প্রেরণ করা হয়। অবশিষ্ট ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়।
উল্লেখ্য, মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের চার্জশীটভূক্ত ৩নং আসামি।

জাহিদুল ইসলাম টিপুকে নজরদারি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য কিলার নাছির শুটারদের অর্থ প্রদান করে। ঘটনার সময় কাছাকাছি জায়গায় তাকে সাদা শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও কেডস পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ১নং চার্জশীটভূক্ত আসামি। তার নামে অস্ত্র আইনে পল্লবী থানায় আরও একটি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে সমন্বয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। মতিঝিল থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন তিনি।

গ্রেফতারকৃত আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ প্রদানের সাথে জড়িত। সে রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ২নং চার্জশীটভুক্ত আসামি। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধে ১২টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

গ্রেফতার ওমর ফারুক গং হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ টিপু ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলমান রয়েছে।

গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় সুচারু পরিকল্পনায় খুব কাছ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গুলিতে নিহত হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি।