২০৪১ এর পরেও থাকুন : প্রধানমন্ত্রীকে রওশন
প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল পর্যন্ত তো বটেই, এরপরেও তিনি যেন ক্ষমতায় থাকতে পারেন, সেই কামনা করছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
জাতীয় পার্টির নেতা মনে করেন, এমন কোনো কাজ নেই যেটা প্রধানমন্ত্রী পারেন না। এ কারণে তিনি যেন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন, সেই কামনা করছেন রওশন এরশাদ।
বিরোধীদলীয় নেতার এই নজিরবিহীন চাওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। নিজ নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ সদর থেকে গণমাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে রওশন এরশাদ এ কথা বলেন।
সরকার সারাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের যে প্রকল্প নিয়েছে তার প্রথম পর্যায়ে আজ নয়টি স্থাপনা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই এই ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
যে নয়টি জেলায় এই নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি ময়মনসিংহ। আর সে জেলাতে বাছাই করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান রওশন। আর এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন যেন জনগণের জন্য কাজ করতে পারেন, সে কামনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্থানীয় উন্নয়নে নানা দাবি তুলে ধরে রওশন বলেন, ‘আমি এসব বলছি, কারণ, আপনি পারবেন না, এমন কোনো কাজ তো নেই। আমরা দোয়া করছি আপনি শুধু ৪১ সাল পর্যন্ত না, আপনি শতায়ু হোন। আরও বেশি থাকেন, আজীবন বেঁচে থাকেন।’
বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
রওশন বলেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ থাকবে আপনি (শেখ হাসিনা) বেঁচে থাকবেন এবং জনগণের জন্য কাজ করবেন এবং এটাই আমরা চাচ্ছি।’
দেশের সব জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদের পাশাপাশি শিল্পও চান রওশন। বলেন, ‘আবেদন জানাচ্ছি, আপনি যেমন ৫৬০টি জেলাতে, উপজেলাতে মসজিদ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন, তেমনি প্রতিটি জেলাতে, উপজেলাতে একটি করে মোট ৫৬০টি শিল্প গড়ে তুলবেন যেন মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।’
‘আমাদের প্রিয় নবী বলেছেন, তুমি যদি ক্ষুধার্ত থাক, তাহলে তুমি নামাজ করতে যেয়ো না। আগে খেয়ে নাও, তারপর শান্তিমতো নামাজ পড়ো। তাই আপনার কাছে আমার আবেদন এটা আমরা চাই আপনার কাছে।’
ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করায় ধন্যবাদ জানিয়ে এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির দাবিও জানান রওশন। বলেন, ‘গেজেটটা দ্রুত চাই তাড়াতাড়ি, যাতে করে আমরা নির্বাচনটা করতে পারি।
‘আরেকটা কথা হলো… প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন চাব, তখন তো সবই চাব। একটা একটা চাব নাকি? নদী খননটা চাই।’
রওশন যখন আরও কিছু উন্নয়নের দাবি জানাচ্ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দেন। বলেন, ‘মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা, আপনি এগুলো পার্লামেন্টে বলেন, আজকে আমরা মসজিদে থাকি।’
তবে রওশন তার কথা চালিয়ে গিয়ে বলেন, ‘না না তারপরও…’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘না, না, এখানে রাজনৈতিক বক্তৃতা নিচ্ছি না। আজকে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছি। আর আপনি দয়া করে পার্লামেন্টে… এই যে সামনে পার্লামেন্ট আছে কয়দিন পর। তখন বলেন।’
রওশন বলেন, ‘না না, পার্লামেন্টে তো অনেক কথা বলি। এখানে বলছি এই জন্য যে আপনি আজকে মসজিদ উদ্বোধন করেছেন এই উপলক্ষে।’
‘আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার কাছে যখন চাইব, তখন বেশি করে চাইব। অল্প কেন চাব? ’-আবার বলেন রওশন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর শতায়ু এবং ২০৪১ সালের পরেও (ক্ষমতায়) থাকার কামনা করে রওশন বলেন, ‘আপনাকে অনেক অনেক দোয়া করছি, আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’
রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন মূলত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জন করায়। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ওই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও। তবে তাকে ভোটের আগে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ভর্তির পর রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচন যায়।
আর ভোট শেষে এরশাদকে বাদ দিয়ে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতা বানায় জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল।
আবার বিরোধী দলে থাকলেও জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী এবং দুই জন প্রতিমন্ত্রী আছে মন্ত্রিসভায়। এরশাদ নিজেও মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। আর সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দলের সদস্যরা মন্ত্রিসভায় থাকায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে মুখ দেখাতে না পারার কথাটি সংসদেই বলেছিলেন তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন