২১ আগস্টের হামলা আওয়ামী লীগের সাজানো : রিজভী
২১ আগস্ট সিম্পল ঘটনা, পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন ঘটনা ঘটে-বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এমন বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই দলের আরেক নেতা রুহুল কবির রিজভী এই হামলাকে আওয়ামী লীগেরই পরিকল্পিত ঘটনা বলেছেন। তার দাবি, ২৪ জন নিহত হলেও শেখ হাসিনার বেঁচে যাওয়া সন্দেহজনক।
রিজভীর দাবি, সেই সময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে বিব্রত করতে এই ঘটনা সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওলামা দলের এক দোয়া অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রিজভী। যুক্তরাজ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডান চোখে অস্ত্রোপচারের পর তার আরোগ্য কামনায় এই দোয়ার আয়োজন করা হয়।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। এতে ব্যাপক প্রাণহানি ছাড়াও শতাধিক নেতা-কর্মী নিহত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে এই হামলায় জড়িতদের বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগ তখন ফাঁস হয়ে যায়। তখন আলামত নষ্ট, যুক্তরাজ্যের তদন্ত সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে ডেকে এনেও তাদেরকে সহযোগিতা না করা এবং বিরক্তি প্রকাশ করে তাদের চলে যাওয়া আর মূল অপরাধীদের বাঁচিয়ে জজ মিয়া নামে এক নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর ঘটনাও ঘটে।
পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তদন্ত করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। আর ২০০৯ সালে অধিকতর তদন্ত করে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি চলতি বছর শেষ হওয়ার আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এই হামলার ১৩ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ওই হামলার পর হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে বলে বিএনপি চিকিৎসকরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আবার হামলার পর পর হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা ছাড়াও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।
‘ওখানে বোমা ফুটলো কিন্তু তিনি সিকিউরর্ড হলেন’
তবে রিজভী বলছেন উল্টো কথা। তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে বলা হয়েছিলো মুক্তাঙ্গনে সভা করার জন্য। করেননি কেন? আপনারা আওয়ামী লীগের অফিসের কাছে সভা করলেন। এরমধ্যে তো কোনো কিছু লুকিয়ে আছেন, কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে। ঘটনা কী? ওখানে বোমা ফুটলো কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) সিকিউরর্ড হলেন।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা যদি বলি, বিএনপি সরকারকে বিব্রত করার জন্য আপনার লোকরাই এই কাজ করেছেন। আপনার প্রতি সহানুভুতি আসবে, আপনি বেঁচে থাকবেন। আপনার কিছু লোক মরে গেলে তো কি আসে, যায় আসে না’।
টার্গেট খালেদা জিয়া-তারেক রহমান
রিজভী বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, ২১ আগস্টের ঘটনা পরিকল্পিত একটি ঘটনা ছিলো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার আরেকটি প্রমাণ কী জানেন? তাদের আন্দোলনের ফসল মইন-ফখরুদ্দিনও তারেক রহমানকে ২১ আগস্টের ঘটনায় জড়াতে পারেনি কোনোভাবেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের মনোনীত কাহার আখন্দ (তদন্ত কর্মকর্তা)কে নিয়োগ দিয়ে তারেক রহমানকে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়ে ঢুকানো হয়েছে। অর্থাৎ টার্গেট হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান অর্থাৎ বিএনপির ভাবমূর্তিকে খাটো করা এবং তার(শেখ হাসিনা) প্রতি সহানুভুতি বাড়ান।’
রিজভী বলেন,‘এক এক করে ঘটনাগুলো যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন অত্যন্ত পরিকল্পিত এই ঘটনা। এই ঘটনা ঘটিয়েছেন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে যে, তারেক রহমানকে ধরতে হবে, বেগম খালেদা জিয়াকে ধরতে হবে, তার সরকারকে ইয়ে করতে হবে।’
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী কারাবন্দি দলের সহসভাপতি আবদুস সালাম পিন্টুকে ২১ আগস্টের মামলায় জড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে আমাদের এক মন্ত্রীর ভাইকে অভিযুক্ত করেছেন, যেকোনো পরিবার থেকে যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারে, সেজন্য তো তার ভাই দায়ী হতে পারে না। তিনি ছাত্রজীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতি করেছেন, ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন, মওলানা ভাসানীর সাথে রাজনীতি করেছেন, জিয়াউর রহমানেরও সাথে রাজনীতি করেছেন আবদুস সালাম পিন্টু। আজকে তাকে আপনারা সেই মামলায় জেলে পাঠিয়েছেন। যার ধর্মীয় উগ্রবাদী সন্ত্রাসী রাজনীতির সাথে ছাত্রজীবন থেকে সম্পর্ক নাই।’
রিজভী বলেন, ‘এখন যদি আমরা বলি, পিলখানার বিডিআর হত্যার সাথেও আওয়ামী লীগ জড়িত, আপনারা ক্ষমতায় আসার পরপরই এই ঘটনা ঘটেছে। তাহলে যত সেনা অফিসার মারা গেছেন এরজন্য আওয়ামী লীগ-এটাই তো সঠিক হবে। এর উত্তর তাদের কিছু জানা নেই।’
ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কাজী সেলিম রেজার পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া, ওলামা দলের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা আলমগীর হোসেন খলিলী, হাফেজ জসিম উদ্দিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন