ছায়ানটে বোমা হামলা :
২১ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলা
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের দিন সকালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। এসময় অনুষ্ঠানস্থলে আগে থেকে পুঁতে রাখা দু’টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং ১০-১৫ মিনিট পর আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সাতজন প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা করেন। দু’টি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন।
তবে বিস্ফোরক মামলাটির বিচার শেষ হয়নি ২১ বছরেও। মামলাটি বিচারের শেষ পর্যায়ে এসেও এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।যুক্তিতর্ক পর্যায়ে এসে আসামিপক্ষের তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষী জেরার আবেদনে ফের বিচারকাজ ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, সব আশঙ্কা কাটিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে।
মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছর ২১ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট সাক্ষী ৮৪ জন। যার মধ্যে ৫৪ জন আদালতে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর গত ৩ এপ্রিল কারাগারে থাকা আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন।
আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে গত ১০ এপ্রিল মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ছিল। তবে ওইদিন আসামি আসামি আরিফ হাসানের আইনজীবী মিজানুর রহমান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফকে পুনরায় জেরার আবেদন করেন। কিন্তু আদালত সেই আবেদন নামঞ্জুর করেন। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২০ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
তাই বিচারের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে এ প্রক্রিয়া ফের ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে সব শঙ্কা কাটিয়ে দ্রুতই শেষ হবে এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া।
এ আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁঞা বলেন, কোভিডসহ অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মামলাটি বিচারের শেষ পর্যায়ে এসেছে। আশা করছি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে দ্রুতই এ মামলার রায় হবে।
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক মামলাটি শেষ পর্যায়ে এসেছে। আমরাও চাই, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে দ্রুত এ মামলার বিচারকাজ শেষ হোক।
দু’টি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনো পলাতক। অন্য মামলায় মুফতি আব্দুল হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিল হাইকোর্টে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।
অপরদিকে চার্জশিট হওয়ার পর বিস্ফোরক আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এক এবং হত্যা মামলাটি তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। দু’টি মামলা যেহেতু একই ঘটনার, তাই ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা দু’টি একই ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি পাঠান। কিন্তু রেজিস্ট্রারের দফতর থেকে চার বছর কোনো নির্দেশনা না আসায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।
চার্জগঠনের পর প্রথম সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণে ধীরগতি চলে আসে। তাই আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুরও প্রায় আট বছরেও মামলাটির বিচারকাজ শেষ হয়নি।
এ মামলার আসামিরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল।
এর মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলায় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তাই এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক।
অপরদিকে মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া কারাগারে আছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন