৩০ বছর পর প্রমাণ হলো তিনি গরু পাচার করেননি
যশোরের কৃষক আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে গরু পাচারের অভিযোগে ওঠে ১৯৮৬ সালে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাঁচ বছরের দণ্ড দেন বিচারিক আদালত। দণ্ডের সেই ঘানিও টানতে হয় কৃষক কাদেরকে। ওই ঘটনার ৩০ বছর পর হাইকোর্ট রায় দিলেন, ‘তিনি নির্দোষ’।
কারাবরণের সেই দিনগুলো কাদেরকে কে ফিরিয়ে দেবে- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি আদালত সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত রায় ‘কৃষক কাদের নির্দোষ’- বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে। যিনি বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিয়েছেন যশোরের ভুক্তভোগী ওই কৃষককে।
সরকারি সংস্থা সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী কুমার দেবুল দে জানান, ১৯৮৬ সালের ২৭ আগস্ট বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) একজন ল্যান্সনায়েক যশোরের শার্শা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় শার্শা উপজেলার সোলেমান মোড়লের ছেলে আবদুল কাদের এবং আবু বকরের ছেলে মফিজুর রহমানকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারত থেকে তারা ছয়টি গরু পাচার করে এনেছেন। মামলার আগের দিন তারা আটক হন।
আইনজীবী আরও জানান, এ মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষে যশোরের বিশেষ জজ আদালত তাদের দুইজনকে পাঁচ বছর করে সাজা দেন। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তৎকালীন যশোরের হাইকোর্ট বেঞ্চে তারা আপিল করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকায় স্থানান্তর হয়। সেই সঙ্গে ঢাকায় আসে তাদের আপিলও। কিন্তু সেই আপিলের খোঁজ রাখেননি কেউ। এরই মধ্যে সাজা খেটে বের হন তারা।
তাহলে কীভাবে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলো- এমন প্রশ্নে কুমার দেবুল দে বলেন, পুরাতন মামলাগুলো শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নেয়ার পর মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) আসে। তখন হাইকোর্ট দেখেন যে, ওই মামলার আইনজীবী এম এ ওয়াহাব মারা গেছেন। এরপর হাইকোর্ট আসামিকে আইনজীবী নিয়োগ করতে নোটিশ পাঠান। এ নোটিশ পেয়ে ঢাকায় আসেন কৃষক আবদুল কাদের।
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনায় গত ডিসেম্বরে কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘গরু নিয়ে যাচ্ছিলাম সাতমাইলের হাটে। মাঝপথে বিডিআররা ধরলো। ক্যাম্পে নিয়ে পরের দিন চালান দিলো। সাজা খাটলাম। ৩০ বছর পর নোটিশ আসলো। নোটিশ পাওয়ামাত্রই ঢাকায় চলে আসি।’
ঢাকায় এসে নিজের আইনজীবী না পেয়ে আব্দুল কাদের সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির দ্বারস্থ হন। কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেখে কাদের অস্বচ্ছল। তার মামলা লড়াই করার সামর্থ নেই।
কুমার দেবুল দে বলেন, এ বিষয়ে প্যানেল আইনজীবী হিসেবে দায়িত্বটা পড়ে আমার ওপর।
তিনি বলেন, ওকালতনামায় কাদেরের সইয়ের পর মামলাটি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করি। শুনানি শেষে আদালত বুধবার রায়ের দিন ঠিক করেন। সেই অনুসারে আজ রায় হয়। রায়ে আপিল মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। অর্থাৎ কাদের খালাস বা নির্দোষ।
কী কারণে খালাস পেলেন কাদের- এ প্রশ্নের জবাবে কুমার দেবুল দে বলেন, বিচারিক আদালতের রায়টি সঠিক ছিল না। কারণ তার বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
মামলার আপিল শুনানি হতে এত দেরি হলো কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপিল করার পর মামলার তদবিরকারক আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি। ওই মামলার আইনজীবী ছিলেন এম এ ওয়াহাব। পরে তিনিও মারা যান। গেল জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট থেকে আবদুল কাদেরকে চিঠি দেয়া হয় মামলায় আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার জন্য। সেই চিঠি পেয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বিচারিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত মফিজুর রহমান কারাভোগ শেষে মারা যান বলেও জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন