৫০০ টাকার অক্সিজেন কেড়ে নিল নবজাতককে!

মানুষ হাসপাতালে যায় সেবা নিতে। কিন্তু সেই হাসপাতাল যদি হয় জীবন বেচা-কেনার বাজার, তাহলে মানুষ চিকিৎসা সেবা যাবে কোথায়। মাত্র ৫০০ টাকার জন্য হাসপাতাল নামক কসাইখানায় ঝরে গেল নবজাতকের প্রাণ। এই মৃত্যুর দায় নেবে কে?

এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবীর কোনো প্রাণিই বাঁচতে পারে না। মাত্র ৫০০ টাকার জন্য সেই জীবন বাঁচানো অক্সিজেনের অভাবে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা কি মৃত্যু নাকি হত্যা!

রোববার (৬ আগষ্ট) সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৮ নম্বর শিশু সার্জারি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে এ ঘটনায় শিশুটির মরদেহ ওয়ার্ডে রেখে বিক্ষোভ করেছে স্বজনরা।

নিহত নবজাতক ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের বাহাদুরপুর বিহারীপাড়া মহল্রলা হাসান আলীর ছেলে।

মৃত নবজাতকের বাবা হাসান আলী জানান, বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) শিশুটি জন্ম নেয়। এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার (৫ আগষ্ট) রাত ৯টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৮ নম্বর শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়।

শনিবার (৫ আগষ্ট) রাত ১টার দিকে শিশুটির নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হলে বিষয়টি কর্তব্যরত নার্সকে জানানো হয়। এ সময় ওই নার্সকে অক্সিজেন দেয়ার কথা বললে তিনি অক্সিজেন নেই বলে জানান। পরে একজন এসে জানান, ৫০০ টাকা দিলে অন্য ওয়ার্ড থেকে অক্সিজেন এনে দেবেন। এত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা একটি নষ্ট অক্সিজেন সিলিন্ডার এনে রেখে চলে যায়।

হাসান আলী আরো অভিযোগ করে বলেন, সারারাত কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মিনতি করে ডাকার পরও কেউ আসেনি। ফলে বিনা চিকিৎসায় তার ছেলের মৃত্যু হয়।

মৃত শিশুটির মা মনোয়ারা বেগম জানান, শুধু অক্সিজেনের অভাবে আমার সন্তান মারা গেল। শিশুটি যখন শ্বাসকষ্টে ভুগছিল তখন চিকিৎসকদের বারবার ডাকলেও কোনো চিকিৎসক আসেনি। তিনি দায়ী চিকিৎসক ও নার্সদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এ বিষয়ে হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, শিশুটির মলদ্বার ছিল না। এছাড়া আরো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল শিশুটি। সেই কারণে মারা গেছে। এখানে ডাক্তারদের কোনো গাফিলতি ছিল না।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অজয় রায় বলেন, শিশুটিকে যে সময়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সেসময় তার অপারেশন করার মতো অবস্থাও ছিল না। আমার জানা মতে শিশুটিকে অক্সিজেন দেয়া হয়েছিল। হয়তো অসাবধানতার কারণে অক্সিজেন খুলে যেতে পারে।

অক্সিজেনের জন্য ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।