৬০ বছর গায়ে পানির ছোঁয়া লাগায়নি মানুষটা! কিন্তু কেন?

বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। কালের নিয়মে শরীর ভেঙেছে আমু হাজি-র।

কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে তিনি গত ৬০ বছর ধরে গোসল করা বন্ধ করে দিয়েছেন। বেঁচে চলেছে এক আজব জীবন। শুধু তাই নয়, দিনের মঝে একাকিত্ব যখন ঘিরে ধরে, তখন মানুষটা কুকুর-বিড়ালের পায়খানা পুড়িয়ে ধূমপান করেন। জানি জানি কথাটা শুনে গা গুলিয়ে উঠছে। আমারও একই অবস্থা। কিন্তু কেন এমন জীবন বেছে নিয়েছে মানুষটা?

গোসল না করার কারণ
কোনও কারণে তার মনে হয়েছিল গোসল করলে নাকি তিনি অসুস্থ হয়ে যাবেন। তাই ২০ বছরের পর থেকে গায়ে পানি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন আমু হাজি। শুধু তাই নয়, তার খাওয়ার ধরণও সাধারণ মানুষদের মতো নয়। আমু খিদে পেলে ভাত-রুটি খান না, তার প্রথম পছন্দ পোঁচে যাওয়া সজারু।

আর এমনটা তিনি ১-২ বছর নয়, টানা ৬০ বছর ধরে খেয়ে আসছে। এবার বলুন তো এমন মানুষের কথা আগে শুনেছেন কখনও? ইরানের এক পাহাড়ী গ্রামে তার বাস।

ধূমপানে অরুচি নেই!
একা একা থাকতে থাকতে একাকিত্বের সঙ্গে লড়াইটা আমু জিতে গেছেন ঠিকই। কিন্তু মাঝে মাঝে সাপের বিষের মতো একা থাকার কষ্টটা কেমন যেন রক্তে মিশতে থাকে ৮০ বছরের বৃদ্ধের। তখন মাথা ঠিক থাকে না। মনে হয় একটু ধূমপান করলে মন্দ হত না। সে সময় আমু ধূপপান করেন। বাতাসকে ভারি করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেন ধোঁয়ার জাল। কিন্তু ভুলেও তিনি তামাক ব্যবহার করেন না। তার পছন্দ প্রাণীদের শুকিয়ে যাওয়া পায়খান। এমন জিনিস দিয়ে নেশা করলে নাকি দারুন আমেজ তৈরি হয়, এমনটাই দাবি এই আজব মানুষটির।

গল্পবাজ
কখনও কেউ আমুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে পাকড়ে ধরেন মানুষটা। আসলে গল্প করার ইচ্ছাটা এখনও মেটেনি তার। তাই তো কাউকে পেলেই শুরু করে দেন নিজের জীবন কাহিনি। এমন ভাবেই একদিন এক ডাক্তারকে নিজের উদ্ভট জীবন প্রসঙ্গে নানা কথা বলছিলেন আমু। সব শোনার পর ওই ডাক্তারের মনে হয়েছিল নোংরাভাবে থাকতে থাকতে, নোংরা খাবার এবং পানি খেতে খেতে আমুর শরীরটা নিশ্চয় ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। কিন্তু আজব ব্যাপার, বাস্তবে এমনটা হয়নি। ওই চিকিৎসক আমুর শরীর পরীক্ষা করে দেখেন এত অত্যাচারের পরেও তার শরীরে কোনও রোগ বাসা বাঁধেনি। শুধু তাই নয়, সবদিক থেকে মানুষটা বেজায় সুস্থও আছেন। কিভাবে যে এমনটা সম্ভব হল, সে উত্তর যদিও আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি।

দাঁড়ি কাটে আগুন দিয়ে
একেবারে এমন কাজটাই করে থাকেন এই বৃদ্ধ। যখন তার দাঁড়ি অনেকটাই বড় হয়ে যায়, তখন অতিরিক্ত অংশটা কেটে না ফেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতেই তিনি ভালবাসে। কেন করেন এমনটা? এই প্রশ্নের উত্তর একবার আমু জানিয়েছিলেন, গোসল না করলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে সবসময়ই তার মন চায়।

আসল খবর
অনেক খোঁজ খবর চালানোর পর দেখা মিলল কিছু মানুষের। যে গ্রামে আমুর ২০ বছর কেটেছে, সেই গ্রামের বাসিন্দা হল এরা। তারা জানালো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর পরই আমু একটি মেয়েকে খুব ভালবেসে ফেলেছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে যায়। সেই দুঃখে, যন্ত্রণায় সারা জীবন একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন হাজি। সেই থেকেই তার বাস জঙ্গলে জঙ্গলে। বন্ধ গোসল, খাওয়া-দাওয়া। হে ইশ্বর, ভালবাসার মারে মানুষটা যখন ক্ষতবিক্ষত, তখন তুমি কোথায় ছিলে, কোথায় ছিলে তুমি! সব হারিয়ে নিঃস্ব সে এখন! যেন সেই আরবের মজনু। মধ্যযুগের আরবী সাহিত্যের অমর প্রেমগাঁথা লাইলী-মজনুর নায়ক মজনু তার অদেখা প্রেমিকার জন্য এভাবেই শোক করেছিলেন জীবনভর।

এমন জীবনে কি তুমি খুশি?
খুব খুশি! এমনই উত্তর পাওয়া যায় আমুর থেকে। তার মতে, যারা বড় বড় অট্টালিকায় থাকে তাদের অনেক কিছু হারানোর ভয় থাকে। তার কাছে কিছু নেই হারানোর মতো, যা ছিল তা আনেক আগেই সে হারিয়ে ফেলেছে। তাই এই পৃথিবীতে তার থেকে খুশি মানুষ আর দ্বিতীয় কেউ নেই বলেই মনে করেন আমু হাজি।

সূত্র: ডেইলি মেইল ও বোল্ডস্কাই