‘৯১ সালের পর এই প্রথম হাসিনার বিপক্ষে নেই খালেদা
১৯৯১ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুত্থানের পর যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ও ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ছাড়া বাকী সব নির্বাচনেই সব দল অংশ নিয়েছে।
যদিও সবগুলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের যে নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছিলো সেটিও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। আর এবার সব দল অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই।
এটিকেই দুটি নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হিসেবে উল্লেখ করছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “সব দলের অংশগ্রহণে হলেও সব দল মাঠে নেই প্রচারে। মাইনাস টু একটা থিওরি এসেছিলো রাজনীতিতে। এবার খালেদা জিয়া মাইনাস হয়ে গেলো। দু নেত্রীর অংশগ্রহণেই ৯১, ৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিলো। কিন্তু এবারই প্রথম একজন নেত্রী মাঠে আরেকজন জেলে আছেন”।
যদিও দুর্নীতি মামলায় সাজা পাওয়ার কারণেই খালেদা জিয়া এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেননা। তবে ৯১ সালের পর এবারই প্রথম কোনো নির্বাচন হচ্ছে যেখানে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নেই খালেদা জিয়া।
কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের যে জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এই জোট বিজয়ী হলে কে নেতৃত্ব দেবেন সে সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনেও সেনাসদস্যদের রাখা হলেও এবার তারা কাজ করছে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে।
পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফেমার সভাপতি মুনিরা খান বলছেন দশ বছর আগে ও পরের অংশগ্রহণমূলক দুটি নির্বাচনের একমাত্র মিল হচ্ছে দুটি নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে বা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, “দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হলে মানসিক ও নির্বাচনী সেট আপ সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে। কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে কাজ করতে হবে। কিন্তু এবার তারা কতটুকু সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করছে তা বলতে পারবেনা কারণ দলগুলো অভিযোগ করেই যাচ্ছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক রয়েই গেলো”।
মুনীরা খান বলছেন নির্বাচন নিয়ে এবার দলগুলো থেকে অভিযোগ অনেক বেশি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে দলগুলোর মধ্যে সমান প্রতিযোগিতা হলেও এবার বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি জোট তাদের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় ও তাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর ওপর হামলা এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার বলছেন ২০০৮ এর মতো না হলেও দলগুলো নির্বাচনে আসায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ” ৯১ সালের পর এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে সে কারণে সরকার ও বিরোধী দল অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। এটা ঠিক ২০০৮ এ যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিলো সেটি এবার তুলনামূলক কম। তবে এবার নির্বাচনের আগের আশংকার মাত্রাও এবার কম। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার দেয়ার মানুষের মধ্যে যে দম আটক পরিস্থিতি ছিলেন সেটি একেবারে উবে গেলো”।
মিস্টার মজুমদার বলছেন রাজনৈতিক ও নির্বাচন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী হলে দলীয় সরকারের অধীনেই নিয়মিত অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে আর সেটি করতে হবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই।
তিনি বলেন রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে ও নিরপেক্ষ ও অবাধ হলে এবারের নির্বাচন থেকেই তার সূচনা হতে পারে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন