অংশ নেয়া দুটি বিষয়েই ‘এ’ গ্রেড পেল নুসরাত
যৌন নিপীড়নের পর হুমকি-ধমকি মাথায় নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষায় অংশ নেন নুসরাত জাহান রাফি।
সেই আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে বুধবার। ফলাফল বিবরণীতে দেখা গেছে, কোরআন মাজিদ, হাদিস ও উসুলে হাদিস পরীক্ষায় নুসরাত জাহান রাফি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। বাকি পরীক্ষায় আর অংশ নিতে পারেননি নুসরাত। যে কারণে অকৃতকার্য সম্বলিত ফল আসে তার।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে। এ মাদ্রাসায় এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন বলেন, নুসরাত সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে ভালো ফল করতো। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা শোক ধরে রাখতে পারছেন না। বুধবার মাদরাসায় পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখেও নেমে আসে শোকের অশ্রু। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের স্বজনদের।
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের বিলাপ যেন থামতেই চায় না। তিনি বলেন, আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।
নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে নুসরাতের পরীক্ষার ফল বের করেন। বাড়িতে গিয়ে বোনের পরীক্ষার ফলের কথা জানান মাকে।
আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নোমান। তিনি বললেন, আমার বোন যদি ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারতো তাহলে ভালো ফলাফল অর্জন করতো।
গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এ ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার অনুসারীরা নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।
জানা গেছে, নুসরাত ছাত্রী হিসেবে মেধাবী ছিলেন। ১ ও ২ এপ্রিল দুটি পরীক্ষায় অংশও নেয় সে। পরে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এদিন নুসরাতকে কৌশলে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফেনী সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সেখানে ১০ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে নুসরাত মারা যান।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন