অনিয়ম ঠেকাতে প্রস্তুত রেলওয়ে : বুধবার থেকে মিলবে ঈদের টিকিট
আসন্ন ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে বুধবার (২২ মে) রাজধানীর পাঁচ রেল স্টেশনে একযোগে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে। এই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে প্রতিবছর ঈদের টিকিট কিনতে এসে নানা অনিয়ম, টিকিট কালোবাজারির মধ্যে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তবে চলতি বছর টিকিট বিক্রিতে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে রেলওয়ে। মাঠে মনিটরিং টিম ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টায় রাজধানীর পাঁচ স্টেশনে একযোগে শুরু হবে রেলের আগাম টিকিট বিক্রি।
রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেন ভায়া যমুনা সেতু, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন, তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন, বনানী স্টেশন থেকে নেত্রকোণাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেন এবং ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলভবন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট দেওয়া হবে।
ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এ বছরই প্রথমবারের মতো রাজধানীর পাঁচ স্থানে বিক্রি করা হবে ঈদের টিকিট। ওই পাঁচ জায়গায় পর্যাপ্ত বুথ ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ঘরমুখো মানুষ কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে হলেও টিকিট কিনতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২২ মে দেওয়া হবে ৩১ মের টিকিট, ২৩ মে দেওয়া হবে ১ জুনের টিকিট, ২৪ মে দেওয়া হবে ২ জুনের টিকিট, ২৫ মে দেওয়া হবে ৩ জুনের টিকিট এবং ২৬ মে দেওয়া হবে ৪ জুনের টিকিট। ফেরত যাত্রীদের জন্য ২৯ মে দেওয়া হবে ৭ জুনের টিকিট, একইভাবে ৩০ ও ৩১ মে এবং ১ ও ২ জুন দেওয়া হবে যথাক্রমে ৮, ৯, ১০ ও ১১ জুনের টিকিট।
একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন। এ জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। রেল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭২ হাজার টিকিট বিক্রি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেই হিসেবে ঈদের ৫ দিনে ৩ লাখ ৫০ হাজার যাত্রীকে সেবা দেবে রেলওয়ে। ৯৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেনও নামবে।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (১ জোড়া), চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ জোড়া), খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে মৈত্রীর রেক দিয়ে খুলনা ঈদ স্পেশাল, ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটে ঈশ্বরদী ঈদ স্পেশাল, লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমনি ঈদ স্পেশাল, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে শোলাকিয়া স্পেশাল-১ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শোলাকিয়া স্পেশাল-২ চলবে। এর মধ্যে শোলাকিয়া স্পেশালগুলো ঈদের দিন সেবা দেবে।
এরই মধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নাগরিকদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে রেলওয়ে।
এর আগে গত বুধবার (১৫ মে) রাজধানীর রেলভবনে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তুতির বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি আগামী ২২ মে থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে আট জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে এক জোড়া, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে দুই জোড়া, মৈত্রী রেক দিয়ে স্পেশাল হিসেবে চলবে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে।
এছাড়া ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা রুট একটি, লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে একটি, শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে ঈদের দিন, শোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন স্পেশাল ট্রেন হিসেবে চলবে।
ঈদের অগ্রিম টিকিট কবে কোনদিনেরটা মিলবে এই সম্পর্কেই জানান রেলমন্ত্রী। তিনি জানান, আগামী ২২ মে দেয়া হবে ৩১ মে’র টিকিট, ২৩ মে দেয়া হবে ১ জুনের, ২৪ মে দেয়া হবে ২ জুনের, ২৫ মে দেয়া হবে ৩ জুনের এবং ২৬ মে দেয়া হবে ৪ জুনের টিকিট।
এছাড়া রেলের ফিরতি টিকিট বিক্রি ২৯ মে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২৯ মে দেওয়া হবে ৭ জুনের, ৩০ মে দেওয়া হবে ৮ জুনের, ৩১ মে দেওয়া হবে ৯ জুনের, ১ জুন দেওয়া হবে ১০ জুনের এবং ২ জুন দেওয়া হবে ১১ জুনের টিকিট।
মন্ত্রী আরও জানান, অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। তবে স্পেশাল ট্রেনের কোন সীট মোবাইল অ্যাপে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ঈদের পাঁচদিন আগে ৩১ মে থেকে রেলওয়েতে ট্রেনের কোনো ডে-অফ থাকবে না। ফলে ৪৮টি বিশেষ ট্রিপ পরিচালিত হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৫ মে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস চালু করা হবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটির উদ্বোধন করবেন।
এছাড়া টিকিট কালোবাজারী প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঢাকা, ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খূলনাসহ সকল বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাব এর সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারী প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে।’
তিনি বলেন, টিকিট কালোবাজারি রুখতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখিয়ে একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। ঈদের আগে ও পরে মালবাহী ট্রেন বন্ধ থাকবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন