অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ‘রূপান্তরের রূপরেখা’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

‘রূপান্তরের রূপরেখা’ প্রস্তাব বিষয়ক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক আব্দুল হাসিব চৌধুরী, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ড. সামিনা লুৎফা ও মোশাহিদা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা সবাই একটা ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্য আছি। জনগণের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কারণে একটা অসাধারণ প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই রাজনৈতিক সংকট মুক্তির জন্য আমাদের অবশ্যই একটা পরিকল্পনার দিকে যেতে হবে। এই পরিকল্পনাটা এই সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমেই সূচিত হবে।

প্রস্তাবে বলা হয়, অবিলম্বে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে নাগরিক-রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক, বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের অংশীজনদের নিয়ে একটি জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-শ্রেণির অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। এই সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে।

রূপান্তরের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর অংশীজনদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সর্বদলীয় নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি ছায়া সরকার গঠিত হবে। তারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, যেন দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয়। এ ধরনের ছায়া সরকার নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।

এছাড়া জুলাই হত্যাকাণ্ড ও জনগণের ওপর নৃশংস জুলুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারে জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে করা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিল করতে হবে। এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি, সরকার গঠনের ছয় মাসের মধ্যে একটি সাংবিধানিক পরিষদ (কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি) গঠনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা, নির্বাচিত সাংবিধানিক পরিষদ এমন এক গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রস্তাব, যে সংবিধানে স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, জনবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক কোনো ধারা থাকবে না। সেই সংবিধানের ভিত্তিতে সরকার অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবে।

পরে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না, বরং অবনতি হবে। সরকার যত দ্রুত পদত্যাগ করবে, তা দেশের জন্য, তাদের নিজেদের জন্যই ভালো। গণভবন খোলা বলা হচ্ছে, এটি ১৪ জুলাই খোলা হলে এত রক্তপাত হতো না।

তারা আশা করেন, সরকার আর জটিলতা সৃষ্টি না করে দ্রুত পদত্যাগ করবে।