অন্যায়ভাবে গুলি হলে প্রতিকার মিলবে : এইচটি ইমাম

মাদকবিরোধী অভিযানে কাউকে অন্যায়ভাবে গুলি করা হলে তার স্বজনদের প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

গত ৪ মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সাড়াঁশি অভিযানে ৪০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন মাদক বিক্রেতা নিহতের ঘটনাটি নিয়ে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেন ইমাম।

এই অভিযানে যারা নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে একজনও নিরপরাধ মানুষ নেই- এটা কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন? এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘আসামি নিহত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার পর পরই মামলা করা হয়। এর ওপর তদন্ত চলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জবাবদিহি করতে হয়’।

‘যে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দিয়েছেন তাকেও রিপোর্ট পাঠাতে হয়। পোস্টমর্টেম হয়।’

‘তবে কাউকে যদি অন্যায়ভাবে গুলি করা হয়, তাহলে তার আত্মীয় স্বজন সুবিচারের জন্য আইনের আশ্রয় চাইতে পারেন।’

মাদক চোরাচালানী, বিক্রেতা বা মাদক ব্যবহারকারীই হোক, সংবিধানে সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সংবিধান অনুযায়ী সবার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে- এ প্রসঙ্গে ইমাম জানান, ২২০০ জনকে আদালতের মাধ্যমেই বিচারে মুখোমুখি করা হয়েছে। ছয়শ মাদক কারবারি ও মাদক সেবনকারীকেও স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে।

‘তবে যদি কোন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে থাকে, কোন নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে যদি এরকম হয়ে তাকে, তাহলে অবশ্যই তার বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। তেমন ঘটনা ঘটলে সরকার অবশ্যই তা দেখবে।’

অন্য এক প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাবেক সচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতরে কেউ যদি মাদকের সাথে যুক্ত থাকে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না।’

এই অভিযান হঠাৎ করে হয়নি

মাদক নির্মূলে অভিযান হঠাৎ করে হয়নি জানিয়ে ইমাম বলেন, এর পেছনে রয়েছে মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভিপ্রায়।

এই অভিযানের পটভূমি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছর অন্তত তিনটি বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা বলেছিলেন। তার ধারাবাহিকতাতেই এ অভিযান চলছে।’

মাদকের সামাজিক ঝুঁকি বর্ণনা করে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘মাদক পাচারের সাথে মানবপাচার এবং বেআইনি অস্ত্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। প্রথমে আসে মানবপাচার, মানবপাচারের হাত ধরে আসে মাদকপাচার এবং এই দুটিকে রক্ষা করার জন্য বেআইনি অস্ত্র আসে।’

এই অভিযানের সাফল্য বর্ণনা করে ইমাম জানান, প্রথম ১৮ দিনে ২২০০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট এবং বিচারিক আদালতে ৬০০ জন মাদক বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে মোট ৪৮৬টি মামলা করা হয়েছে।

এই অভিযান এর আগে শুরু হয়নি এবং মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে কেন এই অভিযান?- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মেয়াদ এখনই শেষ হয়ে যায়নি।’

‘মাদক সমস্যা একটি রোগের মতো। রোগ যখন চরম আকার ধারণ করে তখন সবার টনক নড়ে। তাই একে এর বেশি বাড়তে দেয়া যায় না।’

ইমাম বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে সাফল্য না এলে আগামী নির্বাচনে ওপর তার মারাত্মক ও প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অভিযান চালানো হচ্ছে কি না, এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন তিনি সরাসরি নাকচ করে দেন।

বলেন, চলতি বছরের গোড়া থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। জানুয়ারি মাসে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নানা ধরনের সামাজিক সমস্যার মধ্যে মাদককে গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

‘এরপর পুলিশের দ্বিতীয় আরেকটি অনুষ্ঠানে এবং তৃতীয়বার গত মাসে সারদায় পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে ভাষণেও তিনি মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।’

গত ১১ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ দেয়ার সময় শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের পাশাপাশি মাদক সমস্যা থেকে ছাত্র সমাজকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।

‘ওই ভাষণেই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জানান যে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি ইতোমধ্যেই র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

গত ৩ মে র‌্যাব সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদের মতো সমস্যার মোকাবেলায় র‌্যাব যেমন সাফল্য দেখিয়েছে, তেমনি মাদক চোরাচালানী বা মাদক কারবারের বিরুদ্ধে র‌্যাব কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।

এইচ টি ইমাম বলেন, ‘মাদক তৈরি, বিক্রি, পরিবহন এবং সেবনের সাথে যারা জড়িত তাদের সবাই সমানভাবে দোষী বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। মূলত এর পর থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর এই বিশেষ অভিযান শুরু হয়।’