অন্যের মুকুট পরে সংসদে যেতে চাই না: শমসের মবিন চৌধুরী

অন্যের মুকুট পরে সংসদে যেতে চান না জানিয়ে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা কোনো মার্কা কারো কাছে ভিক্ষা চাইনি, চাইব না। অন্যের মুকুট পরে আমরা সংসদে যেতে চাই না।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার দল জোটের কথা কখনো বলেনি বলে এসময় তিনি জানান। নিজের তৃণমূলে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পাশাপাশি সংসদের আসন সংখ্যা সাড়ে ৪০০ করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তিনি।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১টায় সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এসব কথা বলেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিলেট-৬ আসনে সোনালী আঁশের প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরী।

তৃণমূল বিএনপি সিলেট জেলা কমিটির আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-২ আসনে দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী আব্দুর রব মল্লিক, সিলেট-৪ আসনের মো. আবুল হোসেন এবং সিলেট-৫ আসনের কুতুব উদ্দিন আহমদ শিকদার।

সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সঠিকভাবে ভোট গণনা নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা (ইসি) এবার একটি সুষ্ঠু, অবাদ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবেন বলেছেন। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এবং সেটা যেন সঠিকভাবে গণনা হয় সেটা এখন নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের জন্য।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার কোনো ধরনের কথা হয়নি জানিয়ে এসময় শমসের মবিন বলেন, ‘অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে তৃণমূল বিএনপি কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনোরকম জোটের কথা বলেছিল কিনা। আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই তৃণমূল বিএনপি কোনো সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের কথা বলেনি।

হ্যাঁ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আলাপ আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা বলেছি, আমরা নির্বাচন করব।নিজের জোরে, নিজের শক্তিতে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে। সেখানে জনগণ যে রায় দেবে তা আমরা মেনে নেব। তৃণমূল বিএনপির এই নির্বাচন হচ্ছে একটি যাত্রার শুরু। এই পথ ধরে দলটি আগামীদিনে এগোবে।’

অন্যের প্রতীক নিয়ে তারা সংসদে যেতে চান না জানিয়ে তিনি এসময় বলেন, ‘আমরা কোনো মার্কা কারো কাছে ভিক্ষা চাইনি, চাইবও না।

অন্যের মুকুট পরে আমরা সংসদে যেতে চাই না। নিজের মাথায় যেটা আছে সোনালী আশ সেটাকে ধরে রাখতে চাই। এক সময় বাংলাদেশের গর্ব ছিল সোনালী আশ। এটি রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে পাকিস্তান আমল থেকে। পরে অনেক উন্নত ধরনের শিল্প এসেছে বাংলাদেশে।’
তৃণমূল বিএনপি সুস্থ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি মূল নীতি রয়েছে। সুস্থ রাজনীতি হয় সুশাসনের ভিত্তিতে। আমাদের দেশের রাজনীতি আমরা দেখছি অসুস্থ হয়ে গেছে। অরাজনৈতিক ব্যবহার, পেশি শক্তি বিদ্যমান সবখানে। টাকার খেলা হচ্ছে চারদিকে।’

দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এবার স্বতন্ত্র নামে কিছু প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে, জানি না আপনাদের অভিজ্ঞতা আছে কিনা, একই দল থেকে একজন প্রার্থী আবার ওই দলেরই একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এতে ভোটারদের মধ্যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকারী পরিবেশ সৃষ্টি হয় কিনা সেটা দেখার বিষয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘একই দেশের এক অংশ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া কানাডা আমেরিকায় গিয়ে বড় বড় ভবন কিনছেন, বড় বড় গাড়ি চালাচ্ছেন। কিন্তু আপনি গ্রামাঞ্চলে যান দেখেন লোকে পেঁয়াজ কিনলে মরিচ কিনতে পারছে না। মরিচ কিনলে ডিম কিনতে পারছে না। অথচ তারাই কিন্তু বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। একই চিত্র আমাদের শিক্ষাখাতে। যাকে ইংরেজি ভাষায় বলে আনঅ্যামপ্লয়েড গ্র্যাজুয়েটস। গ্র্যাজুয়েট হচ্ছেন কিন্তু কর্মসংস্থান নেই। বিশাল একটা গোষ্ঠী-এরা কিন্তু বিপদগামী হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে এদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় কিনা।’

দলের নির্বাচনী ইশতেহারের আংশিক আগাম তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক সংস্কারের সময় এসেছে। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয় স্বাধীন দেশ হিসেবে তখন জনসংখ্যা ছিল মোটামুটি সাড়ে ৭ কোটি। তখন সংসদ সদস্য ৩০০। তখনকার জন্য হয়তো এ সংখ্যা সঠিক ছিল। কিন্তু এখন জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি, ১৮ কোটি। সে সংখ্যা কতটুকু সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা মনে করি ৩০০ সংসদ সদস্য এ জনসংখ্যার জন্য সঠিক নয়। আমাদের ইশতেহারে প্রস্তাব থাকবে সংসদ সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করার। এটি দ্বিগুণ না করলেও আমাদের প্রস্তাব- প্রতিটি উপজেলা একটি সংসদের আসন হয়। তাতে প্রতিটি উপজেলার মানুষ মনে করবে আমাদের প্রতিনিধিত্ব হয়েছে সংসদে।’ এসময় তিনি ব্রিটেনের জনসংখ্যা অনুপাতে সংসদ সদস্যের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের সংখ্যা কম হলেও সাড়ে ৪০০ করা উচিত। আমরা সংসদে তুলে ধরব, গণমাধ্যমে আলোচনা হবে।’

এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শমসের মবিন বলেন, ‘সরকার দলের সঙ্গে আলোচনা হয়নি যে-তা নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই আমাদের আলোচনা হয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছেন আমাদের অবস্থান, কী রাজনীতি হবে, কী নীতি আদর্শ পালন করতে যাচ্ছি, কী প্রস্তুতি। আমি ছিলাম, দলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ছিলেন।

নির্বাহী সভাপতি অন্তরা হুদা আমরা তিনজনই প্রধানমন্ত্রীর আহবানে বসলাম। তাকে বলেছি, দলগতভাবে করব নির্বাচন করব। যে কয়জন হয় নিজেদের প্রার্থী দেব। আমরা ৩০০ প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪২ জন চূড়ান্ত হয়েছে।’

তৃণমূল বিএনপিতে তাঁর সম্পৃক্ত হওয়ার নেপথ্য কাহিনী এসময় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নাজমুল হুদা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হলো আপনি যেহেতু অবসরে আছেন আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন কিনা। তখন আমি আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করলাম-আরেকবার আরেকটু চেষ্টা করে দেখি।’

মুক্তিযুদ্ধ করেই নিজের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে তো আমার দায়িত্ব শেষ হলো না। শেষ পর্যন্ত যদি আমি কোনো প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে যদি কিছু ভূমিকা রাখতে পারি। আমার এলাকার মানুষ আমাকে সুযোগ দেন তাহলে হয়তো চেষ্টা করব। সেই চিন্তা থেকে আমি তৃণমূল বিএনপিতে নিজেকে জড়িত করি।

নির্বাচনের মধ্যে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদি ভবিষ্যতে তৃণমূল বিএনপি একটি দল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে তাহলে বাংলাদেশে একটা অন্যান্য শক্তির একটা স্থান হবে। আশা করি আমরা মানুষের সাড়া পাব। বাকিটা জনগণের ইচ্ছা।’