‘অপশক্তির দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়’

মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি কাউকে রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি এবং শাসন প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণেই যারা সরকারে রয়েছেন এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি আমরা যারা এই সরকারের সমর্থনে রয়েছি আমাদের প্রত্যেকটি কাজ অগ্রাধিকারভিত্তিক এবং সুবিবেচনাপ্রসূত হওয়া জরুরী যাতে পরাজিত অপশক্তি কোনো সুযোগ নিতে না পারে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব উত্তর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে তারেক রহমান এই কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও বিএনপির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু অপুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান,আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, আফরোজা খানম রিতা, বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল।

এছাড়া বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, মহাসচিব এস এন তরুণ দে, বিএনপি সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুশীল বড়ুয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট উপদেষ্টা তপন দে, মহাসচিব তরুণ দে, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মিল্টন বৈদ্য গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজাঁ উৎযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, উপদেষ্টা অ্যালবার্ট পি কষ্টা, মনি স্বপন দেওয়ান, অধ্যক্ষ গণেশ হাওলাদার, ভাইস চেয়ারম্যান অর্পণা রায় দাস, নিতাই চন্দ্র ঘোষ,ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবসহ বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।

তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের পলায়নের পর তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহল ছাড়াও খোদ সরকারের মধ্যেই নানারকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছে কিংবা বর্তমান সরকার কি বিপ্লবী সরকার? কেউ কেউ এ ধরণের প্রশ্নও তুলছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বর্তমান পর্যায়ে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমানে যে ধরণের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এ ধরণের বিতর্ক সরকারের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার কারণও ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সব বিষয় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কিংবা সরাসরি সংবিধানের বিধিবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো পরিহার করে একটি সুচিন্তিত, সুবিবেচনাপ্রসুত পদ্ধতি অনুসরণ করা গেলে ভবিষ্যতে উত্থাপিত যেকোনো ধরণের জটিল প্রশ্ন কিংবা পরিস্থিতি মোকাবেলাও সহজ হবে।

তারেক রহমান আরও বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মিলে মাফিয়া সরকারের পতন ঘটানোর পর এবার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর যাত্রাপথে রয়েছি। যাত্রাপথে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেও আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কিন্তু ‘এক এবং অভিন্ন’। একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সবার অভিন্ন লক্ষ্য’। যেহেতু আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ‘এক এবং অভিন্ন’ সেহেতু নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির তেমন কোনো অবকাশ আছে বলে বিএনপি মনে করে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে পুঁজি করে কিংবা তাদেরকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচার আর তার রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদেরকে-আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে সব ধর্ম বর্ণের মানুষ যার যার উৎসব কিংবা ধর্মীয় রীতিনীতি নিশ্চিন্তে নিরাপদে পালন বা উদযাপন করতে পারেন তেমন একটি রাষ্ট্র এবং সমাজ বিনির্মানের জন্যই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার। সুতরাং, আপনাদের প্রতি বিনীত আহবান পলাতক স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের দোসরদের কোনো উস্কানিতে পা দেবেন না। কোনো গুজব গুঞ্জনে কান দেবেন না।

তারেক রহমান বলেন,১৫ বছরের জঞ্জাল ভেদ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে খেয়াল রাখা জরুরি এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করা না গেলে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সকল সংস্কার কার্যক্রম জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়বে। সুতরাং, সরকারের কার্যক্রমে অগ্রাধিকারভিত্তিক এজেন্ডা নির্ধারণ জরুরি।