অবরুদ্ধ রাজধানীর মিরপুর!

বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করছে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। রাজধানীর অন্যান্য স্থানের মতো মিরপুরের রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন শত শত শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনার বিচার, নিরাপদ সড়কের দাবি আর ‘আমার মা কাঁদে, নৌমন্ত্রী হাসে’ স্লোগানে কম্পিত হচ্ছে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর।

বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হাতে হাত ধরে মূল সড়কে বৃত্ত তৈরি করে যানচলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে দল বেঁধে রাস্তার ঠিক মাঝখানে অবস্থান নিয়েছেন মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজ, জার্মান টেকনিক্যালসহ আশপাশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে রাজধানীর ব্যস্ততম মিরপুর ১০ নম্বরসহ আশপাশের সব এলাকা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিক থেকে মিরপুর ১০ নম্বরে জড়ো থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ছোট বড় মিছিল নিয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সামিল হন। ফলে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে গেলে তারা কার্যত মিরপুর অবরুদ্ধ করে দেন। মিরপুর ১, ১২ ও ১৪ নম্বর এবং শেওড়াপাড়ার দিক থেকে আসা সব ধরনের যানবাহন, প্রাইভেটকার, সিএনজি, পিকআপ আটকিয়ে দিচ্ছেন তারা। এই পথগুলোতে যেসব গাড়ি আসছে, তারা ছুটে গিয়ে লাইসেন্স চেক করছেন।

যদি কোনো গাড়ি চালকের লাইসেন্স না থাকে, তাহলে চাবি নিয়ে তা পুলিশের কাছে জমা দিচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিকে দু’একটি বিআরটিসি বাস ছাড়া কোনো পাবলিক বাস সকাল থেকেই চলাচল করছে না এই পথে।

আন্দোলনে অংশ নেয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিফাত রহমান বলেন, ‘দাবি আদায়ে সব শিক্ষার্থীরা এক হয়ে আমরা আজ রাজপথে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে থাকবই। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের দাবিতে আমাদের যে আন্দোলন, এতে সব মানুষের সমর্থন রয়েছে।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে গণপরিবহন না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইদ্রিস ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, এটা যৌক্তিক। এই আন্দোলন সবার আন্দোলন। যদিও গণপরিবহণ না পেয়ে আমাদের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে, তারপরও চাই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত হোক।’

উল্লেখ্য, গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হন আরও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী।

জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। এর আগে নিহত মিমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।