অবশেষে জলদস্যুদের ফোন,এখনো চায়নি মুক্তিপণ

ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করার আট দিনের মাথায় জাহাজটির মালিকপক্ষকে ফোন দিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।

গতকাল দুপুর ১টার দিকে ‘তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে’ ফোনটি আসে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের কাছে। ফোনে শুধু আলাপ-আলোচনা হলেও কোনো ধরনের মুক্তিপণ কিংবা দাবির কথা জানায়নি দস্যুরা। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘ফোনে কিছু আলাপ-আলোচনা হয়েছে। মুক্তিপণের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।

তবে এখন আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই জিম্মিদশার অবসান হবে। মুক্তিপণ প্রক্রিয়ায় বিমা কোম্পানিসহ বিভিন্ন সংস্থা যুক্ত হবে ধীরে ধীরে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে।’ বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জলদস্যুদের যোগাযোগ শুরুর বিষয়টা ইতিবাচক।

এ ফোনের মাধ্যমে আলোচনার পথটা তৈরি হয়েছে। মালিকপক্ষ ও বিমাকারী প্রতিষ্ঠান জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে বলে মনে করি।’ গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ।

জাহাজে ২৩ নাবিক রয়েছেন, যাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। জাহাজটি চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে নোঙর করেছে জলদস্যুরা। এ সময়ের মধ্যে জলদস্যুদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন জাহাজটির মালিকপক্ষ। তবে জাহাজে থাকা নাবিকদের সঙ্গে পরিবার ও মালিকপক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

নাবিকরা বারবার অডিওবার্তায় মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়ানোর আকুতি জানালেও জলদস্যুদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো দাবি এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। এ সময়ের মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও টহল হেলিকপ্টার জাহাজটি অনুসরণ করে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালেও জিম্মিদের কারণে পিছিয়ে আসে। দীর্ঘ আট দিন অপেক্ষার পর গতকাল প্রথমবারের মতো মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে জলদস্যুদের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মালিকপক্ষের কাছে ফোন আসায় আলোচনার পথ তৈরি হলেও পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। এ ধরনের জিম্মির ঘটনায় মূলত তিন ধাপে মুক্তিপণের বিষয়টি আলোচনা হয়। দস্যুদের ফোন পাওয়ার পর মালিকপক্ষ যোগাযোগ করে বিমাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

বিমাপ্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতা করার জন্য নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক লবিস্ট সংস্থাকে। ওই সংস্থা যোগাযোগ করে জলদস্যুদের প্রতিনিধির সঙ্গে। তিন পক্ষের আলাপ-আলোচনায় নির্ধারণ করা হয় মুক্তিপণের অঙ্ক ও প্রদানের প্রক্রিয়া।

এরপর তিন পক্ষ মিলে মুক্তিপণের অর্থ পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি পরিবহন সংস্থাকে নিয়োগ করে। ওই পরিবহন সংস্থা নগদ ডলার কিংবা জলদস্যুদের চাহিদামতো মুদ্রায় মুক্তিপণ পৌঁছে দেয় নির্ধারিত স্থানে।

এরপর মুক্তিপণের অর্থ কয়েক ভাগে ভাগ হয়। একটা অংশ যায় মধ্যস্থতাকারী ও মুক্তিপণের অর্থ পরিবহনকারী গ্রুপের কাছে। জলদস্যুরা নিজেদের পাওয়া অর্থ তিন স্তরে ভাগ করে। জলদস্যুদের মধ্যে প্রথমে যারা জাহাজে ওঠে, তারা ৩০-৩৫ শতাংশ পায়।

আরেক ভাগ পায় যারা জাহাজটি পাহারা দেয়। এ ছাড়া জাহাজের জ্বালানি, খাওয়াদাওয়াসহ পরিচালনাগত খরচ আলাদাভাবে হিসাব করা হয়। অনেক সময় জলদস্যুদের ছোট কোনো দল যদি জাহাজ ছিনতাই করে, তারা একটা অর্থের বিনিময়ে বড় কোনো গ্রুপের জিম্মায় দিয়ে দেয় জাহাজটি। বড় গ্রুপটি মুক্তিপণ নিয়ে আলোচনা করে।