অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল ‘কমলা সুন্দরী’!

ক’দিন আগেও সার্কাস প্যান্ডেলে বসে হাতিটির কসরত উপভোগ করছিলেন দর্শকরা। এর নাম রাখা হয়েছিল ‘কমলা সুন্দরী’। মাহুত ‘কমলা সুন্দরীকে’ দিয়েই দর্শকদের হাততালি কুড়াচ্ছিল। শুধু কি তাই, সার্কাস প্যান্ডেলের বাইরেও কমলা সুন্দরীকে দিয়ে সড়কের মাঝে আর গ্রামেগঞ্জে টাকা তুলছিল।

কিন্তু সেই ‘কমলা সুন্দরী’ অবশেষে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রোববার মারা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায়। তবে মৃত্যুর পরও কমলা সুন্দরীকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন কৌতূহলী মানুষ। মালিক আসার পর সেটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত ‘দি রাজমণি সার্কাস’র জন্য হাতিটি লালমনিরহাটে আনা হয়। শুক্রবার লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের মিলন বাজার এলাকায় একটি ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হাতিটি। এরপর অনেকটা বিনা চিকিৎসায় রোববার রাতে মারা যায়। মালিকপক্ষ এসে না পৌঁছানোয় সোমবার বিকাল পর্যন্ত মৃত হাতিটি মিলনবাজার এলাকায় পড়েছিল।

মাহুত মনির হোসেন জানায়, ৩১ ডিসেম্বর কালীগঞ্জের সার্কাস প্রদর্শনী শেষ হওয়ার পর হাতিটি সেখানেই রেখে সার্কাস দলটি চলে যায় নারায়ণগঞ্জে। তখন থেকে হাতিটি কালীগঞ্জ-হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল।

মনির হোসেন কমলা সুন্দরীকে দিয়ে হাতীবান্ধার মিলন বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন দোকানপাট ও সড়কে গাড়ি থামিয়ে টাকা তুলে আসছিল। এ অবস্থায় শুক্রবার মহাসড়কে একটি ট্রাক থামাতে গেলে আকস্মিকভাবে ট্রাকটি কমলাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে কমলার সামনের একটি পা গুরুতর জখম হয়। তার আগেই ওর পেছনের একটি পা ভাঙা ছিল। রোববার রাতে মিলন বাজার মৌলভী আবুল কাশেম সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে একরকম বিনা চিকিৎসায় কমলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

হাতির মালিক বগুড়ার মাহস্থানগড়ের তোফাজ্জল হোসেন সরকার সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে জানান, তিনি হাতীবান্ধার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। মৃত হাতিটিকে মাটিচাপা দেয়া হবে। এক বছর পর এর হাড়গোড় তোলা হবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বাবুল মৃত হাতিটি দেখে এসেছেন জানিয়ে বলেন, ‘ট্রাকটি ধাক্কা দেয়ায় কমলা পড়ে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পায়। আগে থেকেই অসুস্থ ছিল হাতিটি। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।’ হাতিটি কালীগঞ্জ থেকে হাতীবান্ধা নেয়া হয়। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র নিয়ে মৃত হাতিটি পুঁতে ফেলতে হবে বলে জানান তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, মৃত হাতিটির ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।