অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার দেখছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেছেন যে তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঢাকার দৃঢ় অঙ্গীকার প্রত্যক্ষ করেছেন, যদিও ওয়াশিংটন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে সম্পৃক্ত নেই।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আমি (বাংলাদেশের) প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের সকল মন্ত্রী, যাদের সাথে আমার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছে, তাদের কাছ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সমর্থনে দৃঢ় অঙ্গীকার শুনেছি।”
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে এবং ‘এটা সম্ভব করতে সাহায্য করার জন্য আমরা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমাদের ভূমিকা রাখতে চাই।’ নির্বাচনী ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দেয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো ‘সরাসরি সম্পৃক্ততা’ নেই।
জেয়া বলেন, নির্বাচনের সময়সূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশের ব্যাপার। গতকালের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা সৌভাগ্যবশত গুরুতর সহিংসতামুক্ত বড় রাজনৈতিক সমাবেশ প্রত্যক্ষ করেছি এবং আমি মনে করি, আমরা যেমন দেখতে চাই- এটি তেমন সমাবেশের উত্তম সূচনা।”
মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সাথে মার্কিন অংশীদারিত্বের গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এখানে এসেছে উল্লেখ করে তিনি একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনে সেই অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার জন্য ওয়াশিংটনের ইচ্ছার ওপর জোর দেন, যা হবে ‘আরও স্থিতিস্থাপক, আরও সংযুক্ত, অধিক নিরাপদ’।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমরা গঠনমূলক, ফলদায়ক এবং সম্পৃক্তামূলক আলোচনা করেছি।” তিনি বলেন, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, প্রতিঘাত বা ভয়ভীতি ছাড়াই সাংবাদিকদের রিপোর্ট করার ক্ষমতা, মানব পাচার প্রতিরোধে সহযোগিতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সভা-সমিতিসহ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়াতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক সমাজ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এবং দেশের শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর (বাংলাদেশের) একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ র্নির্ভর করে।’
আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার জন্য উন্মুখ। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন, অর্থনীতি, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতা থেকে ওয়াশিংটনের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিস্তৃতি প্রতীয়মান হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, অবহিত ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে, যা বর্তমানে নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি ঘোষণা করতে পেরে গর্বিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার্মা (মিয়ানমার) ও বাংলাদেশে মানবিক সহায়তার প্রচেষ্টার সমর্থনে অতিরিক্ত ৭৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি তহবিল প্রদান করছে। অতিরিক্ত তহবিলের মধ্যে বার্মায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি এখানে বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের এবং বাংলাদেশী আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সহায়তায় প্রায় ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
আন্ডার সেক্রেটারি প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন