অবেলার শেষ দেখা ও জাতীয় ঐক্য
ইয়াসিন মাহমুদ : ‘বেলা শেষে দাবি নিয়ে লাভ নেই’-শেখ হাসিনা। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর,৭ অক্টোবর,২০১৮) গত ৬ অক্টোবর ২০১৮, গণভবনে বি এম এ এর উদ্যোগে চিকিৎসকদের সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ সাত দফা দাবি পেশ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের দাবিও করেছে তারা। এ দাবি শুধু আজকের নয়; বিগত ১০ বছর ধরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এ দাবি জানিয়ে আসছে। তবে রহস্যমূলক ভাবে এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটে নেই জামায়াতের নাম! সাধারণ মানুষেরাও সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে মুক্তির পথ খুঁজছে। নতুন মুখের প্রত্যাশায় প্রতিদিন স্বপ্ন বুনছে। আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা এখান থেকে কমপক্ষে ৬ মাস আগ থেকেই একাদশ নির্বাচনের কাজে মাঠে নেমেছেন। ইতোমধ্যে সরকারী অর্থায়নে উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের খতিয়ান জন মানুষের কাছে পেশ করেছেন। আওয়ামীলীগের সকল প্রার্থী জোরে সোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন নেতাদের মাঠে দেখা নেই। এখন এই সময়ে কখন তারা সরকারের সাথে দরকষাকষি করবে। আর সরকার আদৌ তাদের দাবি মেনে নিবে কিনা তা সন্দিহান। আপাতত কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।
আসলেই এই ঐক্য দিয়ে কি সরকার পতন হবে? এই ঐক্যের ভেতরে ভেতরে পূর্বেকার সুসংগঠিত বিশ দলীয় জোট ধ্বংসের কোন মিশন নেই তো! বি এন পির সাথে জামায়াতের ঐক্যে অনেকের গাত্র দাহের খাঁ খাঁ লেলিহান জলতে দেখা গেছে। তাদেরই ইন্ধনে বি এন পি তাদের পরম মিত্র জামায়াত ইসলামীকে হাত ছাড়া করছে না তো? যারা বিএনপি কে সামনে রেখে ঐক্য গঠনে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে তারা সবাই কি জাতীয় মুক্তি চায়; গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ চায় নাকি সুকৌশলে গোপন আঁতাতের দুরভিসন্ধির অভিযান সফল করতে চায় সেটা দেখার বিষয়। সাধারণ জনগণ বার বার মাঠে নেমেছে; আওয়ামী জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির প্রার্থনা করেছে। জামায়াত বিগত দিন গুলিতে কঠোর আন্দোলন করেছে। সরকারের প্রতিটি অন্যায় ,অপকর্মদের বিরুদ্ধে জামায়াত ইসলামী নিয়মমাফিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়ে যাচ্ছেন। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটার বিহীন ভোটের পরে তারা মাঠে সরব ছিলো। বিনা ভোটের অবৈধ সরকারকে তারা মেনে না নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্দোলন বেশ চলছিল। সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলাতে জনগণের মধ্যে একটা ইমেজ কাজ করছিল যে, এ সরকার বেশি দিন টিকবে না। আবার নতুন ভোট হবে। অবাধ, সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কোন সরকার আসবে। কিন্তু আন্দোলনে আত্মবিশ্বাস আনতে পারেনি বি এন পি। শেষমেষ মাঠ ছাড়া হয় তারা। ঘরে তুলতে পারি নি আন্দোলনের কোন ফসল। ফলে নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে নির্বাচিত নিয়ম রক্ষার সরকারই আসল সরকার হয়ে বসে। আবারও জনগণের ভাগ্যে নেমে আসে জুলুম নির্যাতনের খড়গ। এখনো অবধি সেই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে আওয়ামীলীগ। প্রতিদিন বি এন পি ও জামায়াতসহ সাধারণ মানুষের কপালে মামলা, হামলা, গুম, খুনের ভাগ্যবরণ। সবাই এখন তাকিয়ে আছে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে। খেতে বসতে সবাই এখন বলতে শুরু করেছে-‘আওয়ামীলীগ সরকার আর নেই দরকার।’ আসলে তাদের স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সেটা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের ঐক্যের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে। তারা কি জনগণের ভাষা বুঝে সামনে পা বাড়াবে নাকি সরকারী অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী ঐক্য ভাঙা- গড়ার খেলা খেলতে খেলতে বেলা শেষ করে ফেলবে। দুঃখজনক। ১০বছর পর আজ জাতীয় ঐক্যের সখ জেগেছে দেশপ্রেমিক সচেতন রাজনীতিকদের। দেরিতে হলেও এমন উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ।
ইসি মানেই মধ্যস্ততাকারী। সমন্বয়ক। আহবায়ক। আমরা সাধারণত কোন উৎসব আয়োজনে একজন সমন্বয়ক; আহবায়ক নির্ধারণ করি। আয়োজনটি যাতে সুন্দর, সাফল্যমন্ডিত হয়ে লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে পারে। সফলতা-ব্যর্থতা অনেকটাই আহবায়কের আন্তরিকতা ও পেরেশানি এবং দায়িত্বানুভূতির উপর নির্ভর করে। একজন নির্বাচন কমিশনের ওপরও নির্ভর করে একটি দেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং জনগণের সরকার গঠন। সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে বেশ আন্তরিক। আসলে এমন পদ্ধতি কতটুকু নিরপেক্ষতা ও নির্ভরতার তা ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছে। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে একজন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনার দরকার। বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। যে-ই পরীক্ষার্থীসেই পরীক্ষক; যেই খেলোয়াড়; সেই রেফারী। ফলাফল কেমন হয় সবারই অনুমেয়। ধেড়ের কাছে ছাগল পোষ দেওয়া আর ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন অনেকটাই একই। রক্ষকই ভক্ষক। আপাতত দৃষ্টিতে কোন আশার আলো দেখছি না। এখন চারিদিকে একটি শ্লোগান শোনা যাচ্ছে। তত্ত¡াবধায়ক সরকার এই মুহূর্তে দরকার। একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সময়ের অনিবার্য দাবি। অন্যদিকে আমরা যে সংলাপ সংলাপ খেলা দেখছি আসলে এই কর্মসূচি,এই আয়োজনে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। সরকার নিজস্ব ছকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবারো দলীয় সরকারের অধীনে একটি সরকার গঠনের পথে বেছে নিয়েছে। গত ৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা থেকে সরকারকে সাফ জানিয়ে দেন তফসিল ঘোষণার আগেই ফলপ্রসু সংলাপ ও সমঝোতায় আসতে হবে অন্যথায় কঠোর আন্দোলন। নির্বাচন কমিশনার ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ট্রেন মিস করার আশঙ্কা করছে অনেকেই। এখন দেখা যাক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চেতনা কতদূর আগোয়। তাদের গর্জনে বর্ষে নাকি মরুমাঠই মরুমাঠ থেকেই যায় সে অপেক্ষায় এখন বাংলাদেশ সহ পুরো পৃথিবীর মানুষ।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আওয়ার নিউজ বিডি’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন