অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে নীতিমালা তৈরী হচ্ছে : জাহিদ ফারুক
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে ও নির্মাণ সামগ্রীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বালুর। তবে পরিকল্পনাহীন বালু উত্তোলনের রয়েছে নানা ক্ষতিকর প্রভাব। অবৈধভাবে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর তীরের বসতবাড়ী ও ফসলের জমি। সঠিকভাবে বালু উত্তেলন করলে ভাঙ্গন অনেকাংশে কমে আসবে।
এ ব্যাপারে তিনি মিডিয়ার দায়িত্বশীল ভূমিকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অবৈধভাবে বালি উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে স্হানীয় প্রশাসনকে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়পূর্বক বালুমহল লিজ/ইজারা দেয়ার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেয়া প্রয়োজন। অতি শীঘ্রই বালু উত্তোলন সংক্রান্ত নীতিমালা মন্ত্রিপরিষদে উপস্থান করা হবে।
সোমবার (১৩ জুন) সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’-এ প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাস। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বিগত বারো বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার আঘাত সত্ত্বেও কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য এবং জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক অর্জন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথকে মসৃন করেছে। সরকারের একারপক্ষে সবকিছু করা সম্ভব না জনগণেরও সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তিনি জানান, দায়িত্ব নেয়ার পর হতে এ পর্যন্ত ৪৩০টি এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গনকবলিত মানুষের দুঃখ দুর্দশা নিজ চোখে দেখে যেখানে যা করা প্রয়োজন তাৎক্ষণিক সে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ প্রর্যন্ত ১৭ হাজার কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেছে। এই বাঁধগুলোর রক্ষা ও যত্ন প্রয়োজন, তা করতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে যার ৪৫টি কার্যক্রম এককভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর অর্ন্তভুক্ত ২৫টি কার্যক্রম ৫০টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা প্রদানসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও পানি দূষণ কমাতে সক্ষম হবে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় ৬৪টি জেলায় অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়)” প্রকল্পটির আওতায় প্রায় ৫২৬২ কিঃমিঃ নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন করা হচ্ছে। ফলে ১০৯টি ছোট নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। জলাশয়, খাল ও নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হবে। এ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, ২০২২ সালের সংঘটিত আগাম বন্যায় হাওড়ের ৭টি জেলার আওতাধীন ৪,৭২,৭৬৬ হেক্টর ধানি জমির মধ্যে ৩,৩০৩ হেক্টর ধানি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (সুনামগঞ্জ-৩,৩০০ হেক্টর এবং নেত্রকোনা- ৩ হেক্টর)। হাওড় অঞ্চলে সংস্কার ও মেরামতকৃত ৮,৬২ কিলোমিটার বাধেঁর মধ্যে মাত্র ৩,১৫ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (সুনামগঞ্জ- ২৮৫ মিটার এবং নেত্রকোনা- ৩০ মিটার)। সুনামগঞ্জ এলাকায় ১,৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি নদী খনন এবং বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুনামগঞ্জ এলাকায় আগাম বন্যা হতে ফসলাদি ও জানমালের ক্ষতির পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার চলমান রয়েছে। এছাড়া কোথাও কোথাও কৃষিকাজ ও মৎস্য চাষের জন্য জমি লিজ দেয়া হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একই ঠিকাদারের ৫০-৬০ টি কাজ পাওয়ার আর সুযোগ নেই। যারা একাধিক কাজ পেয়েছেন তাদের কাজ শেষ না হলে নতুন করে কাজ দেয়া হচ্ছে না। তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আছে, আমরা আশাবাদি এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
এ সময় বিএসআরএফ সহ-সভাপতি মোতাহার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী আজাদ মাসুম, অর্থ সম্পাদক মোঃ শফিউল্লাহ সুমন, কার্যনির্বাহী সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, শাহজাহান মোল্লা, হাসিফ মাহমুদ শাহ, শাহাদাত হোসেন (রাকিব), মোঃ বেলাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন