অবৈধ ক্ষমতা দখলের দিনটিতে এরশাদের ফের ক্ষমতার আশা
তিন যুগ আগে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে নয় বছর পর গণঅভ্যূত্থানের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতাদখলের দিনটি উদযাপন করতে গিয়ে বলেছেন, তাঁর দল জাতীয় পার্টি আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা নেন সেই সময়ের সেনাবাহিনীর প্রধান এরশাদ। জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে, ‘দেশ স্বাভাবিক হওয়ার পর ব্যারাকে ফিরে যাওয়া’র প্রতিশ্রুতি দিলেও এরপর টানা নয় বছর ক্ষমতায় থেকে ১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর গণঅভ্যূত্থানের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন।
ক্ষমতায় আরোহণের দিনটি উদযাপনের জন্য আজ সেই ২৪ মার্চ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনাকীর্ণ সমাবশে ‘জাতীয় পার্টির জনসমর্থন আছে’ উল্লেখ করে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন এইচ এম এরশাদ।
‘উই আর রেডি’ মন্তব্য করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা এককভাবে নির্বাচন করব। প্রথম বার্তা, আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করব। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করব।’
আজ শনিবার দুপুরে এরশাদের আগে একই মঞ্চে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, যিনি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা। এ সময় এরশাদ তাঁর পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
রওশন এরশাদও এ সময় বলেন, ‘আমরা আর কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হব না। আমরা একক নির্বাচন করব। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব।’
রওশন এরশাদ আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন কিন্তু দেশের মানুষের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। জাতীয় পাটির ইতিহাস জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের ইতিহাস।
এরপর ‘চল চল চল, ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল’ নজরুলের এই রণসঙ্গীত দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন বিরোধী দলের নেতা। এর পরই বক্তব্য দিতে শুরু করেন এইচ এম এরশাদ।
সমাবেশের জনসমাগম দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জাতীয় পার্টির প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ। এত বড় সমাবেশ আমি কখনো দেখিনি। এরপর আরো বড় সমাবেশ হবে।’
জাপা সংসদের বিরোধী দল হলেও সরকারের মন্ত্রিসভায় তাদের সদস্য রয়েছে। পাশাপাশি দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। আজকের সভায় এরশাদ সরকারের বিভিন্ন কর্মককাণ্ডের সমালোচনা করেন।
বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ করে এরশাদ বলেন, ‘দেশের গ্রাম আঞ্চলে যান, গিয়ে দেখুন দেশ কতটা উন্নয়নশীল হয়েছে।’
এ সময় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনাও করেন এরশাদ। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় পচন ধরেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। দেশের শিক্ষামন্ত্রী সহনীয় পর্যায়ে ঘুষ নেওয়ার পরামর্শ দেন। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
এরশাদ আরো বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন গুম-খুনের আতংকে থাকে সব সময়। দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিতে চাই। আমরা দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে চাই। দেশের ছাত্রসমাজ চাকরি পাচ্ছে না। আমরা চাকরি দিতে চাই। দেশটি সুন্দর করে গড়তে চাই।’
সকাল সোয়া ১০টায় কোরআন তিলাওয়াত, গীতাপাঠ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানান।
সমাবেশে পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন বাবলু, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সালমা ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, বিরোধী দলের চিফ হুইফ তাজুল ইসলামসহ পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন