অব্যবহৃত অবস্থায় যবিপ্রবির এলএমএস, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) তৈরি করে যবিপ্রবি। প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে যবিপ্রবির এলএমএস যাতে করে নানামুখি বিড়ম্বনার স্বীকার যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।
সকল একাডেমিক কার্যক্রম এলএমএস এর মাধ্যমে হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়েছে ‘জুম’ অ্যাপসের মাধ্যমে। শুরু হয় ভোগান্তির আরেক অধ্যায় জুমে অনলাইন ক্লাস। নেটওয়ার্ক সমস্যা, ডিভাইস সমস্যা, টাইম সিডল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এমনকি অনেক শিক্ষক শুক্রবারসহ বিভিন্ন দিন রাতেও ক্লাস নিয়েছেন, ক্লাসের ৩০/৪০ মিনিট আগে সিআরের মাধ্যমে জানিয়ে ক্লাস নিয়েছেন । কখনও শিক্ষকদের নেটওয়ার্কের সমস্যা কখনও নিজেদের, কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকা, এমবি শেষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কতিপয় শিক্ষক ব্যতীত প্রায় সকল শিক্ষকই অনলাইন ক্লাসের রেকর্ড সরবরাহ না করেই কোর্স শেষ করে দিয়েছেন, অনেক শিক্ষক কোর্স শেষ না করিয়ে প্রেজেন্টেশন নিয়ে কোর্স শেষ করে দিয়েছেন।
কিন্তু যবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, একজন শিক্ষার্থীকেও পিছে রেখে আমরা অনলাইন ক্লাসে যাব না । কেউ যদি কোন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারে ও পরবর্তী সময়ে রেকর্ড ক্লাসের ভিডিও দেখে তাহলে সেটা জানা যাবে এই এলএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবং সে তার উপস্থিতি সেখান থেকে পেয়ে যাবে। প্রতিটি ক্লাস নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষক তার ক্লাসের রেকর্ডিং ভিডিও সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এলএমএসে দিয়ে দিবে।
এ বিষয়ে ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন টেকনোলজি থেকে যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রকৃতপক্ষে উপকৃত না হয় তবে সেসব টেকনোলজির পেছনে অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এলএমএস শুধু নামে ছিলো, কাজের ক্ষেত্রে এর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শূণ্য।
অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, অনলাইন ক্লাসের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেই এলএমএস তৈরি করল তার আসল কাজটি কি? অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যারটি ব্যবহার না করে জুম আপসে ব্যবহার করেছে । তাহলে এত টাকা ব্যয় করে কেন এই এলএমএস বানানো হল? যেই উদ্দেশ্য বানানো হয়েছে এই এলএমএস তার কোন কাজ কি আদেও হয়েছে? এলএমএসে না ক্লাস নেওয়া হয়েছে , না পেয়েছি ক্লাস রেকর্ড। হাতে গোনা দুয়েকটি বিভাগে ক্লাস নেওয়া সহ ক্লাস রেকর্ড আপলোড করা হয়েছে । তাছাড়া সব বিভাগের অবস্থা একই। তাহলে আমরা যারা ক্লাস করতে পারিনি তাদের উপস্থিতির নম্বর কিভাবে পাব? ৭০% উপস্থিতি না থাকলে অনেকেই আবার পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবে না । এই দায়ভার আসলে কে নিবে ? এখন ক্লাসগুলোর রেকর্ডিং যদি আমরা না পাই সেক্ষেত্রে পরবর্তী সেমিস্টারের পরীক্ষায় আমরা কি করব ? আমার মত অনেকেই অনলাইনে ক্লাস করতে পারিনি। আমরা ক্লাস না করে উপস্থিতির ৮ নম্বার চাই না , ক্লাস রেকর্ডগুলো এলএমএসে আপলোড করা হোক আমরা ক্লাস করেই নম্বার নিতে চাই।
সার্বিক বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন , একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে শিক্ষকদের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) ডেভলোপ করে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সকল শিক্ষকদের এই সিস্টেম চালানোর জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এখন কোন শিক্ষক যদি এলএমএসে ক্লাস না নেয় এবং তার অনলাইন ক্লাসের রেকর্ডিং শিক্ষার্থীদের কোন মাধ্যমে প্রদান না করে থাকেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করা হবে । কোন বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি এমন কোন অভিযোগ আসে তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
তিনি আরও বলেন, সামনে আমরা এই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে তুলব। ২০২২ সাল থেকে সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসগুলো ডিজিটাল ক্লাস রুমের মাধ্যমে নেওয়া হবে। যেখানে কোন শিক্ষার্থী ইচ্ছে করলেই ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে এবং প্রতিটা ক্লাসের রেকর্ডিং আমাদের এলএমএসে আপলোড করা হবে। কিন্তু সকল শিক্ষককে ক্লাস রুমে এসেই ক্লাস নিতে হবে। আমরা সামনের বছর থেকে এই বিষয়গুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখব।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন