অভিভাবকহীন পদশূন্যতায় বেরোবি : আবারো সেশনজটের অপেক্ষায়
এইচ. এম নূর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : চার বছর মেয়াদ শেষে গত ৫ মে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন-নবী। ফলে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় । বিদায়ী এই উপাচার্যের অধীনে ছিলো ঘোষিত-অঘোষিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদসহ ১৭ টি পদ। এদিকে সোমবার থেকে ক্যাম্পাস খুললে তাঁর দখলে থাকা পদগুলো খালি থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক অধিকাংশ কাজে ইতোমধ্যে ভয়ংকরভাবে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানান অনেকেই।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার পদে নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) আগ্রহ না দেখিয়ে নিজেই কব্জা করে রেখেছিলেন তাঁর সময়কাল ধরে। অভিযোগ রয়েছে ট্রেজারার হিসেবে কাউকে নিয়োগের বিষয়ে উদ্যোগ না নিয়ে ইচ্ছেমত আর্থিক কেলেংকারি করেছেন ড. একে এম নূর-উন-নবী। তাঁর সময়ে যোগ্যলোক না পাওয়ার অজুহাতে তিনটি অনুষদের ডিন, তিনটি বিভাগের প্রধান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিউট ( নব নির্মাণাধীন), সাইবার সেন্টার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-ই-লার্নিং সেন্টারের পরিচালকের পদ দখল করে রেখেছিলেন। পদাধিকার বলে ছিলেন সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সলের সভাপতি। প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার পদে স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে দায়সারা করে মূলত সে পদদুটোও নিজের কব্জায় ধরে রেখেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রক্টর নেই প্রায় তিন বছর থেকে, স্থায়ী রেজিস্ট্রার নেই প্রায় চার বছর থেকে, ট্রেজারার নেই দীর্ঘ দিন থেকে, উপ-উপাচার্য নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই। এছাড়াও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের পরিচালক নেই দীর্ঘদিন থেকে ( অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোরশেদ হোসেন দুই বছর পূর্বে এর দায়িত্বে ছিলেন মাত্র)। বর্তমান রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইব্রাহীম কবীরকে অস্থায়ীভাবে (চুক্তিভিত্তিক) নিয়োগ দিলেও এ বছরের ডিসেম্বরে তাঁর মেয়াদ শেষ হবে বলে জানা গেছে।
সুতরাং উপাচার্যবিহীন বেরোবিতে এ সব পদ শূন্য থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে জটিলতা বাড়বে বলে আশংকা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তাই এসব জটিলতা এবং আসন্ন সেশন জট ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রæত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার নিয়োগের ব্যাপারে ইউজিসির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা অবসর সময় কাটাচ্ছেন। কাজ না থাকায় বসে রয়েছেন অনেকেই। উপাচার্যবিহীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও স্বাক্ষর হচ্ছে না। ইতোমধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কপালে চিন্তার রেখা ঘুরপাক খাচ্ছে। উপাচার্য নিয়োগ না হলে অধিকাংশ কাজই স্থবির হয়ে থাকবে। ট্রেজারার এর স্বাক্ষর ব্যতীত কেউই তাদের মাসিক বেতন বিল তুলতে পারবেন না। ফলে অস্ততিতে ভুগছেন প্রায় দেড়শ শিক্ষকসহ প্রায় পাঁচশত এর মত কর্মকর্তা-কর্মচারি।
এ দিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পরিচালকের পদশূন্য থাকায় বিভাগগুলোর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রধানরা। সাবেক বিদায়ী উপাচার্য ঐ পদটিতে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিলেন। চূড়ান্ত ফলাফল (ফাইনাল রেজাল্ট) এর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, অর্থনীতিসহ অধিকাংশ বিভাগের বিভিন্ন সেমিষ্টারের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীরা অতিদ্রæত সময়ে ফলাফল না পেলে চলমান বিভিন্ন চাকুরির জন্য আবেদন করতে পারছেন না বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আসন্ন বিসিএস পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমান বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার ব্যাপারেও আশংকা করছেন।
এমনকি সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট প্রকাশ না হলে পরবর্তী ফাইনাল পরীক্ষাও নিতে পারছেন না শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরাও ফলাফলের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে প্রতিনিয়ত। এমতাবস্থায় সেশনজটের মধ্যে পড়ে থাকা বিভাগগুলো আবারো সেশনজটের প্রহর গুনছে। এমনকি উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য থাকায় উপাচার্যের সামান্য ঘাটতিও পূরণ হচ্ছে না যে পদটি আঁকড়ে ধরেছিলেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন-নবী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু সালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান বলেন, অতিদ্রæত বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগ প্রদান জরুরী। কারণ উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে যার কারণে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে দিনে দিনে যার ব্যাপকতা বর্তমানে আরো বাড়ছে।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁর আঁকড়ে ধরা পদসহ অধিকাংশ পদ এখন শূন্য। এই পদগুলো শূন্য থাকায় এবং উপাচার্য ঐ সব পদগুলো দখল করে থাকায় বিভিন্ন সময়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে একাডেমিকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সে জন্য। সুতরাং এক সঙ্গে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির সুদৃষ্টি কামনা করছি এবং এমন একজন উপাচার্যকে আমরা চাই যিনি একজন ভালো মানুষ হবেন এবং শূন্য পদগুলো পূরনে উদ্যোগী হবেন।
দ্রæত উপাচার্যসহ উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার(কোষাধ্যক্ষ) নিয়োগ এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সুশীল সমাজের মানুষেরা।
উপাচার্যবিহনে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি প্রক্টর শফিক আশরাফ বলেন, এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বড় ধরণের ঘটনা ঘটলে তা ব্যাক আপ (সমাধান) দিবে কে? কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অভিভাবক নেই। সুতরাং নিরাপত্তার প্রয়োজনে দ্রæত উপাচার্য নিয়োগ প্রদান জরুরী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বিধি- প্রো-বিধি তৈরি হয়নি। সাবেক উপাচার্য তাঁর ইচ্ছেমত পদ দখল করে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ করে চালিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং এমন একজন উপাচার্য চাই যিনি এসে বিধি-প্রো-বিধি তৈরি এবং সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে যাবতীয় সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিবেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন