অভিভাবক শূন্য ইবিতে থমকে আছে শিক্ষা কার্যক্রম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নিজেদের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। এমন অভিভাবক শূন্য ক্যাম্পাসে তৈরী হয়েছে নানা সংকট। গতি হারিয়েছে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া গত ০৮ আগষ্ট রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। এছাড়াও ১৭ আগষ্ট ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বরাবর প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে সরজমিনে দেখা যায় উপাচার্য না থাকায় সিন্ডিকেট সভা ব্যতিত ক্লাস পরিক্ষা শুরু করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থবির। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে প্রক্টর পদত্যাগের পরে। শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিয়ে হল পাহারায় রাখলেও ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উৎপাত চরমে ঠেকেছে। উপ-উপাচার্য ও ছাত্রউপদেষ্টা না থাকায় তৈরী হয়েছে নানা সংকট। একাডেমিক কার্যক্রম একেবারে স্থগিত ও প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছে একেবারে ঢিলেঢালা গতিতে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘এমনিতেই প্রত্যয় স্কিম ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার ক্লাস পরিক্ষা। এতে সেশনজট ধীরেধীরে প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা পদত্যাগ করায় নিরাপত্তা শঙ্কাতো রয়েছেই। সর্বোপরি আমাদের মূল অভিভাবক ‘ভিসি স্যার’ পদ শূন্য থাকায় এমন সংকট তৈরী হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যেতে চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো: নওয়াব আলী এবিষয়ে বলেন, ‘সংস্থা প্রধান হিসেবে উপাচার্য না থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।’

অর্থ ও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব পরিচালক শেখ মো: জাকির হোসেন বলেন, ‘দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের অনুমোদন নিতে পারছি না। বিভিন্ন বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সংকট। আশা করছি দ্রুত ভিসি নিয়োগের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান হবে।’

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক সুইট বলেন, ‘উপাচার্য নেই, যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে বিভিন্ন বিভাগে সেশন জট ছিল যা বৃদ্ধি পেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়তে পারে।

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। তখন থেকেই আমরা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেছি। আমরা চাই নতুন প্রক্টর এসে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করুক।

এবিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এ. কে. এম. মতিনুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের ডিনদের নিয়ে মিটিং কল করেছিলাম। কিন্তু মাত্র দুইজন ডিন উপস্থিত হওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি নি। আমরা চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।