ভয়ংকর দূঘর্টনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ৮ জনের গল্প
জামশেদ আলম রনি : বিমান দূর্ঘটনা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ঘটনার মধ্যে অন্যতম। কারণ দূর্ঘটনা বিমান বিস্ফোরিত হলে, বেঁচে থাকাটা অলৌকিক ব্যাপার। এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো বিভিন্ন সময় বিমান দূঘর্টনায় অলৌকিকভাবে একমাত্র বেঁচে থাকা ৮ জনের ঘটনা।
ফ্রান্সেসকা লুইস : ১২ বছর বয়সী মেয়ে, পানামাতে একটি বিমান দূর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত
২০০৭ সালে, পানামানিয়ান পাহাড়ে বিমান দূর্ঘটনায় একমাত্র বেঁচে যাওয়া ফ্রান্সেসকা লুইস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে টিকেছিলেন কারণ লাগেজটি তার শরীরের ওপরেই পড়েছিল এবং ঠান্ডাজনিত অবস্থা থেকে তাকে রক্ষা করা হয়। ১২ বছর বয়সী বালিকাটি তার নৈপুন্যে বেঁচে যায় এবং একক ইঞ্জিনের ক্রেসনা বিস্ফোরিত হয়ে ৩ জন মারা যায়। সে কেবল অলেীকিকভাবে প্রভাব বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তা নয় বরং খাদ্য ও পানীয় জল ছাড়াও আড়াই দিন তার আসনটিতে উল্টো অবস্থায় ঝুলে ছিল। প্লেনে ফ্রান্সেসকার সেরা বন্ধু তালিয়া ক্লেইন (১৩), তালিয়ার মিলিওনিয়ার পিতা মাইকেল ক্লেইন (৩৭) এবং পাইলট এডউইন লাসো (২৩) তাৎক্ষণিক মারা যায়। তারা সবাই পানামাতে তারা ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিল।
বাহিয়া বাকেরি : ১৪ বছর বয়সি কিশোরী, ইয়েমেনি এয়ারওয়েজ দূর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত
বাহিয়া বাকেরি একজন ফরাসী স্কুলছাত্রী, যিনি ইয়েমেনিয়া ফ্লাইট ৬২৬ এর একমাত্র জীবিত হিসেবে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ৩০ জুন, ২০১৩ গ্রান্ডে কমোরের উত্তর উপকূলের নিকটবর্তী ভারত মহাসাগরে বিস্ফোরিত হয় যেখানে ১৫২ জনই প্রাণ হারান। বাকারি, যিনি সাঁতার কাটতে সক্ষম ছিলেন না, ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে উড়োজাহাজের একটি ভারী ধ্বংসাবশেষে আটকে ছিলেন। সিমা কম ২ নামে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি জাহাজ তাকে উদ্ধার করে। তার মা, যিনি প্যারিস থেকে তার সঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটির জন্য ভ্রমণ করছিলেন কমোরোসে, তিনি বিমান দূর্ঘটনায় মারা যান।
মোহাম্মদ এল ফতেহ ওসমান : ৩ বছর বয়সী শিশু, ১১৬ জনের মধ্যে একমাত্র বেঁচে ছিল
২০০৩ সালে, মোহাম্মদ এল ফতেহ ওসমান, সুদান এয়ারওয়েজের ফ্লাইট থেকে একমাত্র জীবিত ছিলেন, যা পোর্ট সুদান থেকে উড্ডয়ন করে একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। ছেলেটি তার ডান পা হারায় এবং ৭৩৭-২০০সি দূর্ঘটনায় ঝলসে যায়। এতে ১০৫ জন যাত্রী এবং ১১ জন ক্রু সদস্য মারা যান। ছেলেটিকে একটি বৃক্ষের ওপর পড়ে থাকতে দেখে একজন ভবঘুরে উদ্ধার করে।
সিসিলিয়া সিচান : যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দূর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত
১৯৮৭ সালে নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ২৫৫ ডেট্রয়েটের মেট্রো বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৪ জন মারা যান। চার বছর বয়সি সিসেলিয়া সিচান নিখোঁজ ফ্লাইটের একমাত্র জীবিত ছিলেন। অবকাশ থেকে ফিরে আসার সময় এই দূর্ঘটনায় তার মা, বাবা, ভাই নিহত হয়। তার পরিচয় কয়েকদিনের জন্য রহস্য হিসেবে ছিল যদি না তার দাদি সংবাদপত্র পড়ে তার সম্পর্কে জানতে না পারতেন। বেঁচে যাওয়া ছোট্ট শিশুটির বেগুনি নেইল পালিশ ছবি ও সামনের দাঁত দেখে ছবিতে তার দাদী পলিন সিমাইচেলা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে চিহ্নিত করেন।
রুবিন ভ্যান অ্যাসু : নেদারল্যান্ডের বাসিন্দা এই শিশুটি বিমান দূর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত
৯ বছর বয়সি ডাচ বালক রবিন ভ্যান অ্যাসুকে তার সিটের মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। অচেতন অবস্থায় ছিল কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছিল। লিবিয়ার মরুভূমির বালিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে তাকে পা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। আফ্রিকা এয়ারওয়েজের বিমানটি ট্রিপোলি যাওয়ার পথে ২০১০ সালের ১২ মে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে ১০৩ জন যাত্রী ও ক্রু মারা যান। ছেলেটি তার বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে সাফারি থেকে বাড়ি ফিরছিল। পরে জানতে পারে একমাত্র সে নিজেই জীবিত আছে।
৬. এরিকা ডেলগাডো : ১০ বছর বয়সি মেয়েটি প্রাণে বাঁচে তার মায়ের জন্য
১৯৯৫ সালে উত্তর কলম্বিয়াতে একটি বিমান দূর্ঘটনায় ভীষন আতঙ্কিত ১০ বছর বয়সি বালিকাকে উদ্ধার করা হয়। যেখানে ৪৭ জন যাত্রী এবং বিমানের ৫ জন সদস্য মারা যান। কর্তৃপক্ষ বলেছে ডিসি-৯ ইন্টারকন্টিনেন্টাল বিমানটি মধ্য আকাশে বিস্ফোরিত হয়, কিন্ত বোগোটা থেকে ৫০০ মাইল উত্তরে মারিয়া লা বাজা শহরের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলো ছাড়াই এটি অবতরণ করে এবং একটি বাঁধের ওপর নিক্ষিপ্ত হয়, তারপরে ডিগবাজি খেতে খেতে একটি অগভীর হ্রদের ওপর পড়ে। এরিকা ডেলগাডো তার বাবা–মা এবং ছোটো ভাইয়ের সঙ্গে বোগোটা থেকে কার্টাগেনাতে যাচ্ছিল।
একজন কৃষক জানান, তিনি একটি সমুদ্র শৈবালের পাশে সাহায্যের জন্য কান্নার শব্দ শুনতে পান। এরিকাকে হাত ভাঙা অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। এরিকা জানিয়েছে, তার মা তাকে প্লেন থেকে বের করে দিয়েছে যেহেতু এটি পৃথক হয়ে পড়ে এবং অগ্নিকান্ড ছড়িয়ে পড়ে।
৭. পল অস্টন ভিক: বিমান দূর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম
পল অস্টন ভিককে এক্ষেত্রে কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে রেকর্ড করা হয়। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারিতে চায়না ন্যাশনাল অ্যাভিয়েশন কর্পোরেশনের বিমান দূর্ঘটনায় তিনি বেঁচে যান যখন তার বয়স ছিল ১৬ মাস। তার বাবা রবার্ট ভিক কানেকটিকাটের একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে চীনে ধর্মপ্রচারক হিসেবে কাজ করতেন। ভিকটর, তার স্ত্রী এবং দুই পুত্রকে নিয়ে সাংহাই থেকে চাংকিং যাচ্ছিলেন। একটি ইজ্ঞিনে আগুন ধরে যায় যা দ্রুত কেবিনে ছড়িয়ে পড়ে। যখন দুটি ইজ্ঞিনে আগুন লাগার বিষয়টি প্রতিয়মান হয় তখন বিমানের ২৩ জন যাত্রী আতঙ্কে লাফালাফি করতে থাকে। ভিক এবং তার স্ত্রী দুই সন্তানকে বাহুতে নিয়ে লাফিয়ে পড়ে। ভিক ও তার ছেলে পল বেঁচে যায়। কিন্তু ৪০ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে ভিক মারা যান। বেচেঁ ছিল তার ১৬ মাস বয়সি শিশুটি।
অং ইউ ম্যান : বিমান দূর্ঘটনা ঘটিয়ে বেঁচে যাওয়া বিশ্বের প্রথম অপহরণকারী
অং ইউ হচ্ছেন বিমান দূর্ঘটনায় ঘটিয়ে বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে বিতর্কিতদের একজন। ১৯৪৮ সালে তিনি ক্যাথে প্যাসিফিক বিমান মিস মাকাও ছিনতাই করতে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটান যেখানে ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এই বিমান বিত্তশালীদের যাতায়াতের কাজ করতো, যেটি বিমানের ইতিহাসে প্রথম অপহরণের শিকার হয়। জেলেরা যখন দেখলো বিমানটি পানিতে দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছে, তখন তারা অচেতন অবস্থায় অং ইউকে ভাসতে দেখে। তাকে অবশেষে অপহরণকারীদের অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তিন বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন