অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন: ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হাসিনা
আলজাজিরার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্রিটেনের সবচেয়ে খ্যাতিমান ব্যারিস্টারদের মধ্যে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটিতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, আল জাজিরায় প্রামাণ্যচিত্র প্রচার হওয়ার পর এটি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্রিটিশ মানহানি বিশেষজ্ঞ ডেসমন্ড ব্রাউন কেসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার ঢাকার সাবেক বাসার শয়নকক্ষে একটি নথি খুঁজে পেয়েছে সানডে টাইমস। এতে দেখা যায়, ডেভিড বার্গম্যানসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে হাসিনার সরকার পরামর্শ চাইছে।
নথিতে আরও দেখা যায়, ব্যারিস্টার ব্রাউন এ ব্যাপারে সহায়তা করতে হাসিনার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতেও সম্মতি জানিয়েছেন।
সানডে টাইমসের খবরে জানানো হয়, ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকায় ডেভিড বার্গম্যানকে বাংলাদেশে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনাও করেছিল তৎকালীন সরকার।
ব্যারিস্টার ব্রাউন পরবর্তীতে ক্লার্ক উইলিয়ামস নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে হাসিনার প্রতিনিধিদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। তিনি যুক্তরাজ্যের আদালতে ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে মামলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রটির পরিণতি ছিল মারাত্মক। এটি ইউটিউবে এক কোটি বার দেখা হয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারও অর্জন করেছে। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইয়ের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
শুধু তাই নয় প্রামাণ্যচিত্রটি মুক্তির পরপরই কাজের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে লোহার বার দিয়ে পেটানো হয়। কিছু লোক নিরাপত্তার ভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সানডে টাইমস জানিয়েছে, ৭৭ বছর বয়সী ব্রিটিশ বার কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ব্রাউন ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এক ভার্চুয়াল সভায় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে সহায়তা করতে সম্মত হন। তারা বার্গম্যানসহ স্বতন্ত্র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদন বলছে, তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেয় হাসিনা সরকার। এর বদলে ডকুমেন্টারিটি সরিয়ে ফেলার জন্য ইউটিউব এবং ফেসবুককে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ঢাকার হাইকোর্ট সরকারের পক্ষে রায় দেওয়ার পরও ইউটিউব এবং ফেসবুক সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
গত বছর ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে হামলা চালায়, যেখানে হাজার হাজার নথি ও ছবি রয়েছে।
এদিকে, মন্তব্যের জন্য সানডে টাইমস ব্যারিস্টার ব্রাউনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি প্রাথমিক বৈঠক এবং পরামর্শ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ব্যারিস্টারের পক্ষে সম্ভাব্য ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশাবলী ফিরিয়ে দেওয়া উন্মুক্ত নয়। তবে তিনি কোনো চিঠিপত্র বা মামলা মোকদ্দমার পথ অনুসরণ করেননি বলেও জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন