অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ঈদের সেমাই
ঝালকাঠি: জেলায় আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেমাই কারখানাগুলোতে শেষ সময়ে সেমাই উৎপাদন করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে শ্রমিকরা। রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিন এ ব্যস্ততা বেড়েই চলছে। কিন্তু কারখানার নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে তৈরি সেমাই কতটা স্বাস্থ্য সম্মত সেটাই দেখার বিষয়।
ঝালকাঠি থেকে উৎপাদিত এসব সেমাই প্রতিদিন পার্শবর্তী জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। নিম্নমানের ডালডা আর পোড়া তেল দিয়ে ভাজা এই সেমাইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইয়ের কোন নজরদারি বা তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শ্রমিকদের হাত থেকে শরীরের ঘাম সেমাইয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এসব লাচ্চা সেমাই তৈরির সময় হাতের গ্লোবস ব্যবহার করছে না তারা। তাই শরীরের ঘাম এ সেমাইয়ের সাথে মিশে যাচ্ছে আনায়াসেই।
ঝালকাঠির ছোট বড় ৬টি কারখানায় ঈদ উপলক্ষে সেমাই তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানায় হাতে গ্লোবস এবং মাস্ক ব্যবহার না করায় শ্রমিকদের হাতে থাকা বড় বড় নখ ও হাঁচি-কাঁশির ময়লা পড়ছে তৈরি সেমাইয়ে। এরসাথে যুক্ত হচ্ছে নিম্নমানের ডালডা ও পোড়া তৈল। এভাবেই প্রতিদিন তৈরি করা হচ্ছে শত শত মন সেমাই। ময়লা, গাদ ও দুর্গন্ধযুক্ত ট্রে এবং কাদাযুক্ত মেঝে পরিস্কার করার কোন উদ্যোগ নেই মালিক পক্ষের। তারা বলছেন- কয়েক দিনের বর্ষার কারণে এর চেয়ে কারখানা পরিস্কার রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মালিক পক্ষের দাবি বিএসটিআই ও স্যানিটারি পরিদর্শক এলেও তাদের পরিবেশ ভালো থাকায় কোন জরিমানা করা হয়না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের কলাবাগানে “মিনার”, কাঠপট্টিতে “জেদ্দা”, “কুলসুম”, “নুরানী”, পশ্চিম চাঁকাঠিতে “মক্কা” ও “মদিনা” সেমাই কারখানায় ব্যস্ত সময় পার করছে মালিক শ্রমিকরা। তৈরি সেমাই ঝালকাঠিসহ পার্শ্ববর্তি জেলায় সরবরাহও শুরু করেছে ইতিমধ্যে। সেমাই তৈরির জন্য খামি (ময়দা দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করণ) রাখার ট্রের উপরে বসে-হাটাহাটি করে কাজ করছে শ্রমিকরা।
এব্যাপারে শহরের কলাবাগান এলাকার মিনার লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক সেলিনা কবির ও কাঠপট্টি এলাকার মদিনা লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক নান্নু মিয়া জানান, আমাদের তৈরি এ সেমাই ঝালকাঠি ছাড়াও বরগুনা, পটুয়াখালি, তালতলী, আমুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারো প্রস্তুতি ভালো। আমাদের কারখানার পরিবেশ দেখতে পৌরসভার স্যানিটারি কর্মকর্তাসহ বিএসটিআইয়ের লোকজন এসে দেখে যায়। আর সেমাইয়ের মন্ড (খামি) তৈরি করতে একবারের বেশি ব্যবহৃত তেল কাজে লাগানো হয়। এছাড়া উপায় নেই।
তারা আরো জানান, রমজানের শুরু থেকেই সেমাইয়ের প্রতি ব্যবসায়ীদের চাহিদা রয়েছে। ২৩ রমজান থেকেই বেচাকেনার চাপ আরো বড়বে। তবে আমরা উৎকৃষ্টমানের তেল ও ডালঢা দিয়ে সেমাই তৈরি করি বিধায় বিএসটিআই এলেও জরিমানা করে না। প্রতিবছর কাঁচা মালের দাম বৃদ্ধি পায়, কিন্তু আমরা সেমাইয়ের দাম বাড়াতে পারছি না। তাই প্রতিবছরই আমাদের ব্যবসার পরিমাণ কমে আসছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের ঝালকাঠি জেলার সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বলেন, সেমাই কারখানার পরিবেশ এবং ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সম্মত কিনা তা দেখতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কয়েকটি কারখানায় গিয়ে জরিমানাও করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মকবুল হোসেন জানান, এখনও সেমাই কারখানাগুলোতে যাওয়া হয়নি। ২/১দিনের মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন