আইএসে যোগদানে আগ্রহী বাংলাদেশি যুবক নিউইয়র্কে আটক
পারভেজ আহমেদ (২২) নামক এক বাংলাদেশি যুবককে আটক করা হয়েছে আমেরিকার জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে। আইএসে যোগ দিতে সৌদি আরব থেকে গত জুনে সিরিয়ায় যাওয়ার পথে পারভেজকে গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ।
এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ওজোনপার্কে তার বাবার বাড়িতে খোঁজ-খবর নিতে থাকে এফবিআই। ১৭ জুলাই পারভেজের কম্পিউটারসহ যাবতীয় কাগজপত্র অনুসন্ধান করে এফবিআই নিশ্চিত হয়, পারভেজ আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যেতে চেয়েছিল।
এফবিআইয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সৌদি পুলিশ তাকে ২৮ আগস্ট নিউইয়র্কে ফেরত পাঠায়। তাকে ২৯ আগস্ট ব্রুকলীনে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করা হয়।
পারভেজ তার মা-বাবার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। নিউইয়র্কের সেরা স্টাইভ্যাসেন্ট হাই স্কুলে অধ্যয়ন শেষে হান্টার কলেজে ভর্তি হন। কলেজে হঠাৎ করেই পারভেজ অনিয়মিত ছাত্রে পরিণত হন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, হঠাৎ করেই বদলে যায় পারভেজ। সবকিছু ছেড়ে সে নিরব হয়ে যায়। গত জুন মাসে বাবার সাথে সৌদি আরবে যায় পারভেজ। সেখান থেকেই উধাও হয়।
ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত অভিযোগ অনুযায়ী পারভেজ তার মা-বাবাকে সে লিখে জানায় যে, আমি যদি কোনো কারণে নিষ্ঠুর হয়ে থাকি/অতিরিক্ত কিছু করে থাকি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমি যা তোমাদেরকে শেখাকে চেয়েছি দয়া করে তা স্মরণ করো।
পারভেজের বিরুদ্ধে আইএসকে হত্যাযজ্ঞে যাবতীয় সহায়তা এবং সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন তথা অসহায়-নিরপরাধ মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। এগুলো প্রমাণিত হলে তাকে কমপক্ষে ২০ বছরের দণ্ড ভোগ করতে হবে।
এফবিআই জানিয়েছে, পারভেজের ফোনে আইএসের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার ছবি ছাড়াও পাঁচ জনকে ঝুলিয়ে হত্যার ছবিও দেখা গেছে। সমকামীদের এভাবেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা উচিত বলেও পারভেজ লিখে রেখেছে। ৯/১১ এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলাকে যথার্থ বলেও অভিহিত করেছে পারভেজ। ফোনে আইএসের লিডার আবু বকর আল-বাগদাদীর ছবিও পাওয়া গেছে। পারভেজ ফোনে লিখেছে, ‘আমরা শীঘ্রই জিহাদে অংশ নিচ্ছি এবং এরপরই আমরা শহীদ হবো। ‘
তদন্তের সময় এফবিআই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পারভেজের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত হবার ইচ্ছের তথ্য জানতে পেরেছে। সে আমেরিকানদের ইসলামের শত্রু হিসেবে মন্তব্য করে এদেরকে শেষ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন স্থানে।
২০১৪ সালের অক্টোবরে পারভেজ একটি পোস্টে লিখেছে, ’কারা জিহাদি? অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের ভূমিতে যে সব মুসলমান শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে আত্মত্যাগ করেন, তারাই জিহাদি। সত্যিকারের সন্ত্রাসী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘
এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে জানুয়ারিতে নিউইয়র্কে ফেরার সময়েই জেএফকে এয়ারপোর্টে এফবিআই পারভেজের মুখোমুখি হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐসব পোস্টের ব্যাপারে পারভেজ তাদের বলেছিলেন যে, সে যখন গাঁজা-আফিমে বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছিল, সে সময়েই ওই ধরনের মতামত প্রকাশ পেয়েছে। তা সত্যি কিছু ছিল না।
গতকাল মঙ্গলবার অপরাহ্ণে পারভেজকে ব্রুকলীনে ফেডারেল কোর্টের জজ জেমস ওরেনস্টাইনের এজলাসে সোপর্দ করার হয়। তাকে জামিনহীন আটকাদেশ গিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন