আগুনে পোড়া রোগীরা কেন কম বাঁচে?
সম্প্রতি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে অগ্নিদদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। এমনো হয়েছে একই পরিবারের ৫ থেকে৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে ধুকে ধুকে মার গেছে। গত মাসে পুরান ঢাকার চক বাজারে জীবন্ত পুরো মারা প্রায় ৭১ জনের মত মানুষ।
এছাড়া অগ্নিদগ্ধের হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা থাকা অবস্থায় এখন অনেকর মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমাদের অনেকের প্রশ্ন আগুণে দগ্ধ রোগীরা কেন কম বাচে?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগুনে পোড়া ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রধান কারণ শ্বাসনালী দগ্ধ হওয়া। অগ্নিদদ্ধ হওয়ার পর যেসব রোগীদের শ্বাসনালি পুড়ে যায়, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েও শ্বাসনালী দগ্ধ ব্যক্তিদের বাঁচানো দুরূহ ব্যাপার।
শ্বাসনালি পুড়ে গেলে কেন মারা যায় মানুষ?
শ্বাসনালি পোড়া রোগীর প্রথমত শ্বাসনালির গতিপথে অতিরিক্ত রক্তরস জমা হতে থাকে। একে পালমোনারি কনজেশন বলা হয়। তারপর পালমোনারি হাইপার টেনশন, পরবর্তী সময়ে শ্বাসনালির সব গতিপথ সরু হয়ে যায়। এ গতিপথে ধীরে ধীরে ইপিথেলিয়াল স্লাফ, ইপিথেরিয়াল কাস্টস জমা হয়। এ কারণে শ্বাসনালির সিলিয়ারি মুভমেন্ট বাধাগ্রস্ত হয় এবং এর গতিপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
তখন শ্বাসনালির ভেতরের অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা বের হতে পারে না বিধায় জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন ফুসফুসে গিয়েও চেঞ্জ হতে পারে না। এ অবস্থায় রোগীর শ্বাসনালির চারপাশের ক্ষতিকারক জীবাণু শ্বাসনালীকে সংক্রমিত করে এবং রোগীর চিকিৎসা আরও জটিল হয়ে যায়। শরীরের সব স্বাভাবিক জৈবিক রাসায়নিক ও বিপাক প্রক্রিয়া ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ফলে লিভার, কিডনি এমনকি দেহকোষের সার্বিক কার্যকারিতা বিপন্ন হয়। এতে মৃত্যুঝুঁকি চরম পর্যায়ে চলে যায়।
অগ্নিদগ্ধদের বিষয়ে জাতীয় বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন জানান, শ্বাসনালি পোড়া রোগীদের মৃত্যুঝুকি বেশি। বেশিরভাগ অগ্নিদগ্ধ রোগীরা শ্বাসনালী পুরার কারনে বেশি মারা যায়।
তিনি বলেন, অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পোড়া ব্যক্তিরও শ্বাসনালি দগ্ধ হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মানুষ সচেতন হলেই শুধু এমন ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
শনিবার সকালেচকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিদগ্ধ জাকির হোসেন (৪৫) নামে আরও একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭১ জনে।ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থেকে তার মৃত্যু হয়।এর আগে শুক্রবার রেজাউলের মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৫১ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
চুড়িহাট্টায় ২০ ফেব্রুয়ারি অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস ৬৭টি লাশ উদ্ধার করে। এরমধ্যে ৪৮ জনের লাশ শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। বাকিদের শনাক্ত করার জন্য তাদের সম্ভাব্য স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নিয়েছে সিআইডি। লাশের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে তা মিলিয়ে শনাক্ত হওয়ার পর হস্তান্তর করা হবে লাশগুলো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন