আগের চেয়ে বেড়েছে : দেশে কোটিপতির সংখ্যা ৭০ হাজার!
আগের চেয়েও বেড়েছে কোটিপতির সংখ্যা। তবে তারা কি করে কোটিপতি হয়েছে তা জানা যায়নি। দেশে বর্তমানে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৭০ হাজার ৪৬৩ জন। একবছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৬৫ হাজার ৯৫১ জন। একবছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৪ হাজার ৫১২ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের তথ্য নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ৯৪১ জন। ২০১৭ সালের একই সময়ে এ ধরনের ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৭৮৪ জন। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এককোটি টাকা আমানত রাখা ব্যক্তি ৫৪ হাজার ৯৭০ জন। ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৮৭। এই হিসাবে একবছরের ব্যবধানে এককোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৮৮৩ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৬২ হাজার ৩৮ জন। ফলে গত দেড় বছরের ব্যবধানে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৮ হাজার ৪২৫ জন। ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী বেড়ে যাওয়াকে ভালোভাবে দেখছেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
তিনি বলেন, ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী বেড়ে যাওয়া মানেই হলো ‘টাকাওয়ালাদের কাছে দেশের ব্যাংক খাত জিম্মি’। এটা হয়েছে আমেরিকার তথা ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে অনুসরণ করার কারণে। এই নীতিতে জোর-জুলুমের মাধ্যমে টাকা বানানোর সুযোগ থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি ধনী হয়ে যাচ্ছে। অন্য শ্রেণি পেছনে পড়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কোটিপতিদের একটা বড় অংশ কালো টাকার মালিক। তার মতে, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকার কারণেও কোটিপতিদের আমানত বাড়ছে । বিনিয়োগের পরিবেশ না পেয়ে অনেকেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৯২ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আমানত কোটিপতিদের রাখা।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৪০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ৩৬০ জন। ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২০৬ জন। ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ২৮৪ জন। ২৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৫১০ জন। ২০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৮২০ জন। ১৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ১ হাজার ৩১৯ জন। ১০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২ হাজার ৯২৬ জন। পাঁচ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৮ হাজার ১২৭ জন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৮০) এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে।
এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন দুই হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে হয় ১৯ হাজার ১৬৩ জন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ১৩০ জনে। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা হয় ২৯ হাজার ৫৩৭।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন