আজ থেকে শুরু হলো নির্বাচনের ‘কাউন্ট ডাউন’

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহল থেকে চায়ের দোকানেও চলছে আলোচনার ঝড়। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনও (ইসি) প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

সোমবার দিনগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সংসদ নির্বাচনের বিশাল এ কর্মযজ্ঞের ক্ষণ গণনা শুরু হলো। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রাক-প্রস্তুতির প্রায় সবই সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, তিনশ আসনের সীমানা নির্ধারণ, ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখের বেশি ভোট কক্ষের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

সচিব আরো বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭’শ কোটি টাকা। খাতভিত্তিক ব্যয়ের জন্য নির্বাচন কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক নির্বাচন সামগ্রী ক্রয় করে গুদামজাত করা হয়েছে। অবশিষ্টগুলো ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই কেনা হবে।

এছাড়া, ৩১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি। এরপর ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তাকে অবহিত করা হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর বৈঠক করে নির্বাচনের দিন তারিখ ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা

ভোটার:

ইসির সর্বশেষ প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। তবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যারা ভোটার হবেন তারাও ভোট দিতে পারবেন।

এ ক্ষেত্র ভোটার সংখ্যা আরো কিছু বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটার প্রতি মাথা পিছু ব্যয় ৮ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি। কিন্তু, ওই হারে প্রার্থীরা টাকা ব্যয় করেছিলেন কিনা তা মনিটরিংয়ে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। এবারও একইভাবে রাখা রয়েছে।

ইভিএম:

সংসদ ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের আইনি ভিত্তি পেলেই তা ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম।

তবে সেটি কম সংখ্যক ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সেনা মোতায়েন:

এছাড়া এই কমিশনার বলেন, ‘আমরা আশা করছি, যেকোনো কারণে যদি প্রয়োজন হয়, ভোটারদের আস্থা আনার জন্য অথবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন হয়, আমরা করব।’

আগের সব নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে একটা আস্থার বিষয় আছে। সেটা হচ্ছে জনগণ মনে করে সেনাবাহিনী থাকলে ভালো হবে। এই প্রত্যাশার জন্যও মাঝে মাঝে নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি নির্বাচনে।’

অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল:

এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংশোধিত আরপিও অনুমোদন পেলে এটিও কার্যকর করবে কমিশন।

তফসিলের পরবর্তী কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরি প্রভৃতি।

আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। এর ৯০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। এই হিসাবে কমিশন চাইলে ২৮ অক্টোবরের পর যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা করতে পারে।