আজ যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১’র ট্রাজেডি

প্রতিদিনের মত ওরা সকালে কাজে গিয়েছিল। কাজ নিয়ে তাদের গর্বও ছিল। ওদের কাজের জায়গা বিশ্ববিখ্যাত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। ওরা ৬ জন বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ আত্মঘাতী বিমান হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি ভবন ধ্বংস হয়। সেই ঘটনায় ২,৯৭৭ জনের সাথে প্রাণ হারান এই ৬ বাংলাদেশীও। তারা হলেন, মুক্তাগাছার নূরুল হক মিয়া, তার স্ত্রী মৌলভীবাজারের শাকিলা ইয়াসমিন, সুনামগঞ্জের সাব্বির আহমেদ, কুমিল্লার মোহাম্মদ শাহজাহান, সিলেটের সালাহউদ্দিন চৌধুরী ও আবুল কাসেম চৌধুরী।

এই ৬ জনের মধ্যে সালাহউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী ছিলেন সন্তানসম্ভবা। এই ভয়াবহ ঘটনার দুইদিন পরে সেই সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তার বয়স হবে এ বছর ২২ বছর। অর্থাৎ ৯/১১ এর ঘটনার প্রায় সমান বয়সী সে। যে ২,৯৭৭ জন এই ঘটনায় মারা যান, তাদের ১০৫ ব্যক্তির স্ত্রী ছিলেন অন্তঃসত্তা।
৯/১১এর চারটি যাত্রীবাহী বিমানকে ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়ে যারা ২,৯৭৭ জন নিরীহ, নিরাপরাধী, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছে তাদের অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। যে স্বামী তার স্ত্রী হারিয়েছেন, সে স্ত্রী স্বামীকে, যে পিতা বা মা তার সন্তানকে, যে ভাই বোনকে বা বোন ভাইকে হারিয়েছেন, তাদের কষ্ট, তাদের কান্না নিশ্চয় অন্যরা অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু সে কেবল কিয়দংশ। যে ১০৫টি শিশু জন্মগ্রহণ করে পিতাকে পায়নি, তারা কি ক্ষমা করবে হামলাকারীদের?
পৃথিবীর লক্ষ বছরের ইতিহাসে এই ঘটনাটি ছিল অভিনব। যেমন আকস্মিক ছিল ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথমার্ধে জাপানের হিরোশিমা, নাগাসাকিতে আণবিক বোমা বিস্ফোরণ। এই ঘটনায় যারা মারা যান তারাও ছিল নিরীহ নিরাপরাধী মানুষ।

২০০২ সাল থেকে প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বর স্মরণ করা হয় এই হারিয়ে যাওয়া মানুষদের যাদের অধিকাংশের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। কারো কারো কেবল দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে যখন আঘাত করা হয় এবং এর পরপরই যখন টাওয়ার দুটি ভেঙে পড়ে সেই সময়কে স্মরণ করে বিউগেল বাজানো হয়। সকাল থেকে এই হারিয়ে যাওয়া মানুষদের স্বজনরা যেখানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ছিল সেখানে মৃতদের স্মরণে নির্মিত সরোবরের দেয়ালে কালো মার্বেলে খোদিত প্রতিটি নিহতের নামের ওপর স্বজনরা ফুল দিয়ে আসেন। স্মরণ অনুষ্ঠানে নিহতদের স্বজনরা উচ্চারণ করেন তাদের নাম। একইভাবে স্মরণ করা হয় পেন্টাগনে নিহতদের এবং পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত বিমানের যাত্রীদের সেখানে আয়োজিত শোকানুষ্ঠানে।

প্রতি বছর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বেদিতে স্থাপিত দুটি নীলাভ আলোর বিম আকাশে খাড়াভাবে তৈরি করে টুইনটাওয়ার। রাতে সেই দুটি বিম দেখা যায় ৬৫ মাইল দূর থেকে।
যারা মনে করেছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারকে ধ্বংস করবে, তারা বুঝতেও পারেনি সেই জায়গায় ১২ বছরের মধ্যে গড়ে উঠবে আরেকটি ভবন নতুন স্থাপত্যে। জানান দেবে, মানুষ মরে যায়, কিন্তু পরাজিত হয় না।