আদি হতে এ পর্যন্ত সুবর্ন অদ্বিতীয় (শেষ পর্ব)
রুবাইত হাসান : যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি অনলাইন টেলিভিশন টাইম টেলিভিশনে তার একটি সাক্ষাৎকার ছাপানো হয়। এই সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, বিস্ময় বালক সুবর্ণ একটি কলমকে লাঠির মতো ধরে সমাধান করে যাচ্ছে একের পর এক কঠিন গণিত, জ্যামিতি, পদার্থ বিজ্ঞানের সমাধান। রাসায়নিক সংকেতগুলো কোনো ভুল না করেই অনর্গল বলে যায়। পৃথিবীর বিখ্যাত ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর LouiseRichardson শিশু বিজ্ঞানী সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর ৫ম জন্মদিনে গিফট পাঠিয়েছেন। তাকে চিঠি লিখে অভিবাদন জানিয়েছেন। তার মেধার প্রশংসা করেছেন। তার ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে উৎসাহিত করেছেন। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সুবর্ণর কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়ে গত ২ নভেম্বর ২০১৬ তাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চিঠিতে বারাক ওবামা লিখেছেন, ‘’প্রিয় সুবর্ণ, আশা করছি তুমি তোমার কঠোর পরিশ্রম এবং অর্জনের জন্য গর্ব অনুভব করো। তোমার মতো শিক্ষার্থী আমেরিকায় আরো দরকার, যারা স্কুলে কঠোর পরিশ্রম করার চেষ্টা করে, বড় স্বপ্ন দেখে এবং আমাদের সমাজের পরিবর্তন ঘটায়। আমাদের দেশ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। কিন্তু আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে এসব মোকাবিলা করা কোনো ব্যাপারই নয়। তুমি তোমার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও, আমি তোমার সঙ্গে আছি। তোমার কাছে আমি অনেক বড় কিছু প্রত্যাশা করি।‘
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্টের কাছে সে যেমন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রন পেয়েছে তেমনি বারাক ওবামা শুধু নয় প্রিন্স,রাণী এলিজাবেথ অসংখ্য বিশ্ব ব্যক্তিত্ব আর কিছুদিন আগে চিঠি পেয়েছে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাস্পের কাছ থেকে। এই যে বারাক ওবামার কাছে চিঠি পেল, আমি আপনি একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বা এমপি সাহেবের কাছে চিঠি পেলে কী করবো? নিশ্চয় সব কাজ ফেলে আগে কী লিখিছে তা দেখা বা পড়ার জন্য আনন্দ আর উত্তেজনায় ফেটে পড়বো, ফেইসবুকে এসে হ্যাপি অথবা প্রাউড ফিলিং দিয়ে ইয়া বড় এক লুতুপুতু পোষ্ট দিয়ে দিবো। কিন্তু ওবামার কাছে প্রাপ্ত চিঠিটা, পড়বো এক সময় বলে কয়েকদিন যাবত অংকের সমাধানেই ব্যস্ত সে। অতঃপর পড়ে সে এটা নিয়ে কিন্তু হৈচৈ করেনি।শুধু দুই ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছিল বিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দামের একটি মুচকি হাসি! তার বাবা চট্টগ্রামের সন্তান রাশেদুল বারির জন্ম ১৯৭৯ সালে। উচ্চশিক্ষার জন্য নিউইয়র্কে আসার পর তিনি ব্রঙ্কসের লিমন কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির বারুখ কলেজে অঙ্কের খণ্ডকালীন অধ্যাপক এবং নিউ ভিশন চার্টার হাইস্কুল ফর অ্যাডভান্সড ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্সে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। জেরুজালেম পোস্টে তিনি নিয়মিত কলাম লেখেন। রাষ্ট্রনীতি, গণিত, অর্থনীতিসহ পাঁচটি বিষয়ে তার স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। তার লেখা বই জার্মান সোশ্যাল বিজনেস মডেল আন্তর্জাতিক পরিচিত পেয়েছে। বর্তমানে তিনি ডক্টর ড্যানিয়েল কাবাতের সঙ্গে যৌথভাবে ম্যাথমেটিক্যাল ল’জ অব ফিজিক্স নামে একটি বই লিখছেন।
সুবর্ণর বড় ভাই রিফাত আলবার্ট বারির বয়স এক যুগ পেরিয়েছে। সে-ও অসাধারণ মেধাবী। সপ্তম গ্রেডে পড়ছে সে। হাইস্কুলে না গিয়েই বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চায় রিফাত। এ জন্য সে তিনবার এসএটিও দিয়েছে। সুবর্ণর মা শাহেদা বারি রেমন বারি ব্রঙ্কস কমিউনিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানের মেধার জন্য আমরা গর্বিত। সবকিছু বলেও যেন অনেক কিছু বলিনি। তাই পরিশেষে একটি বই নিয়ে আলোকপাত করতে চাই, রকমারি.কম থেকে আমি পড়েছিলাম বিষ্ময় বালক সুবর্ন আইজ্যাককে নিয়ে Zahid Hossain’র সম্পাদনায় সুবর্ন’র উপর লেখা প্রথম বায়োগ্রাফি। বইটি হাতে নিয়ে মনটা ভরে গেলো। বইটি দেখেই মনে হলো এত তথ্যসমৃদ্ধ আর খুব রঙিন ঝকঝকে। যেটা দরকার ছিলো, উলটে পালটে দেখেই মনে হলো, যে কারুরই বইটি পড়তে মন চাইবে, আসলে সুবর্ন’র এত ক্ষুদ্র জীবনেও কী অপুর্ব সব অর্জন, Rashidul Bari’র মত পিতা আর সুবর্ন’র মত বিষ্ময়কর মেধা’র এক অপুর্ব মেলবন্ধন।
আমারতো খুব মনে হয়, সবাই রাশিদুল বারির মতই পিতা হতে চাইবেন যিনি সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবেন সন্তানকে যত্ন আর ভালোবাসায় লালন করতে করতে। এই বিষয়টা সবাইকে ভাবাবেই। বইটিতে যেভাবে সুবর্নের দৈনন্দিন দিন কিভাবে যায়, কিভাবে সে খুব ছোট থাকতে চক ধরা শিখছিল ব্লাকবোর্ডের সামনে বাবার কোলে থেকে, কিভাবে সে বিষ্ময় হয়ে উঠলো, হয়ে উঠলো আইজ্যাক তার সুন্দর গোছানো একটা প্রতিচ্ছবি আছে, আরো আছে বিভিন্ন স্কলার, প্রফেসর আর গুনী মানুষদের কথা যারা সুবর্ন সম্পর্কে বলেছেন, আছে Kadir Chowdhury Babul এবং তার সন্তান দিহানের কথা, ছোট্ট দিহান’র চোখও স্বপ্নে ভরে ওঠে, ছোট্ট কোমল মনে জাগ্রত হয় আরেকটি সুবর্ন আইজ্যাক! কাদির ভাইও যেন সন্তানকে অনেক দূর নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন, এভাবেই জেগে উঠবে স্বপ্নকে সত্যি করার অদস্ম্য স্পৃহা।
বইটিতে আরো আছে সেই সব মানুষদের কথা এবং ছবি, যারা সুবর্নকে দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন একটা দায়বদ্ধতা থেকে। আমাদের সন্তান, বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী, ভবিষ্যৎ আইনস্টাইন সুবর্ণ’র জন্য শুভ কামনা। ভালোবাসার আর আদরের ছোট্ট সুবর্ন বাংলাকে এমন ভাবেই চিনাবে বিশ্বজুড়ে। শুকরিয়া সৃষ্টিকর্তা।ফি আমানিল্লাহ। জয়তু সুবর্ন আইজ্যাক বারী! (সমাপ্ত)
লেখক : সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন