আদুরীর বিড়ালী || শাম্মী তুলতুল
বাসায় ফেরার পথে স্কুল থেকে আদুরী একটি বিড়ালছানাকে রাস্তায় ছটফট করতে দেখে।কেউ তাকে সহযোগতিা করতে এগোচ্ছেনা। দাড়িয়ে তামাশা দেখছে।বিড়ালটি একটু পর পর আওয়াজ করছে।মি উ উ উ উঃ উঃ, মি উ উ উ।তার আওয়াজ শুনে মনে হল বেচারা খুব কষ্ট পাচ্ছে। তখন লোকজন ঠেলে বিড়ালছানার পাশে এসে বসল আদুরী। তাড়াতাড়ি পানির ফ্লাক্স থেকে বিড়ালছানার মুখে পানির ছিটা দিলো। পানির ছিটা পেয়ে একটু পর ছানাটি তরতাজা হয়ে তার কুঁকড়ে যাওয়া হাত পা ছড়াতে লাগলো।স্বাভাবিকভাবে সে ডাকা শুরু করল। মিয়াও- মিয়াও স্বরে।আদুরী ছানাটিকে আদর করতে লাগলো।ছানাটি চোখ বড় করে আদুরীর দিকে তাকালো। হুট করে ছানাটি একলাফে আদুরীর কোলে উঠে আদুরীর গালে মুখ ঘষতে লাগলো।তা দেখে আদুরীর চোখ কপালে। ছানাটিকে আদুরীর আর রেখে আসতে ইচ্ছে করলোনা। ছানাটিকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় চলে এলো সে। কিন্তু মা…?
ছানা নিয়ে ঘরে ডুকতেই মা প্যানপ্যান করতে লাগলেন।
তোমাকে নিয়ে আর পারা যায়না বাপু।কথা কি একদম শুনবে না? তোমাকে সামলাতে আমার ঢের কষ্ট,আর আপনি নিয়ে এলেন নতুন অতিথি।
আদুরী বেজায় দুরন্ত আর চঞ্চল।চালাকও বটে। মাকে জড়িয়ে ধরে , মামনি আমি ওর দেখাশোনা করবো।তোমাকে কষ্ট দিবোনা দেইখো।মেয়ের মনভোলানো কথা শুনে মায়ের কি আর রাগ থাকে?
বিড়ালছানাটিকে পেয়ে সে মহাখুশী। আদুরীর সাথে ছানাটার এতোই ভাব হয়ে গেলো, একজন আরেকজনকে ছাড়া চলতেই পারেনা।একসাথে ওঠা-বসা,একসাথে খাওয়া এমনকি স্কুলে যাওয়ার সময়ও বিড়ালছানাটিকে না নিয়ে উপায় নেই।
সব জায়গায় ছানাটিকেও যাওয়া চাই, চাই। আদুরী আদর করে তাকে বিড়ালী বলে ডাকে।আদুরী যা বলে,যা করে বিড়ালীও তা অনুকরণ করে। মিয়াঁও মিয়াঁও বলে সে অনেক কথা বোঝাতে চায়। কেউ বুঝুক আর না বুঝুক,আদুরী আর বিড়ালী বোঝে দুজন দুজনের ভাষা।
আদুরী বলে, আমার পুতুলটা নিয়ে আসোতো। বিড়ালী দৌড়ে মুখে কামড় দিয়ে পুতুল এনে হাজির।
আমাকে আদর করোতো বলতেই দেরী আছে? আদুরীর টোল পড়া গালে মুখ ঘষা শুরু। যখন বলে দুধ খেয়ে নাও,সাথে সাথে দুধ খেয়ে বিড়ালী সাবাড়। শুধু কি তাই তারা এক সাথে জড়িয়ে ধরেও ঘুমায়। আদুরী যখন পরীক্ষা শুরু হয় তখন রোজ আদুরীকে পাহারা দেয় বিড়ালী। যেনো আশেপাশে কোন মশা বিরক্ত না করে। ইঁদুর,তেলাপোকা যেন ধাঁরে কাছে ঘেষতে না পারে।খুব খেয়াল রাখে আদুরীর।
একদিন বার্ষিক পরীক্ষার সময় আদুরী পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে তার পায়ের কাছে একটা মস্ত বড় ধেড়ে ইঁদুর কামড় দিতে যাচ্ছিলো।
বিড়ালী দেখা মাত্রই মিয়াঁও বলে ইঁদুরটির গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।বিড়ালী, ইঁদুরের সাথে যুদ্ধ করে আদুরীকে রক্ষা করে। দূর থেকে দুধ হাতে ইঁদুর, বিড়ালীর যুদ্ধ দেখে আদুরীর মায়ের বুক ধুকধুক করে ওঠল।কিন্তু স্বস্তিও পেলো। বিড়ালীর এই মহৎ কাজ দেখে আদুরীর মা এতোদিন, যেই বিড়ালীকে বোকা দিতেন তার জন্য মনে মনে লজ্জিত হলেন..।
ছোট্ট বন্ধুরা পশু-পাখিকে আদর করতে হয়। নিজের পালক বা রাস্তাঘাটের পশু-পাখিকে কখনোই খেপাতে নেই।
সবসময় খেয়াল রাখতে হবে তাদের দ্বারা তোমার বা অন্য কারোরই ক্ষতি না হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন