আনার হত্যার খবরে ‘কান্নায় ভেঙে পড়া’ সেই ব্যক্তিরাই এখন আসামি
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার কলকাতায় খুন হওয়ার পর যারা মায়াকান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এতে এ ঘটনার তদন্তে যেন নতুন মোড় পেয়েছে! এদিকে তদন্ত আটকে আছে ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষায়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু গ্রেফতারের পর চাপা উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে।
জানা গেছে, কলকাতায় এমপি আনার খুন হওয়ার পর তার পরিবারের পাশে দাঁড়ান সাইদুল করিম মিন্টু। এমনকি বাবা হারা মেয়ে ডরিনকে দেন সান্ত্বনা। শুধু তাই নয়, কান্নায় ভেঙে পড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও সান্ত্বনা দিয়ে পাশে ছিলেন তিনি। এ সময় মিন্টুর সঙ্গে সারাক্ষণ ছিলেন তারই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গিয়াস উদ্দিন বাবু।
তবে কললিষ্টে নাম থাকায় কামাল আহম্মেদ বাবুকে ৭ জুন আটক করে পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ওঠে আসে মিন্টুর নাম। পরে মঙ্গলবার বিকালে এমপি আনার হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনায় সহযোগী হিসেবে মিন্টুকে আটক করে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে মিন্টুকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এমপি আজিম কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন অভিযোগ করে বলেছিলেন, বাবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এরইমধ্যে অনেককে আটক করা হয়েছে। আমি শুনেছি, অপরাধীদের বাঁচাতে অনেক জায়গা থেকে তদবির করা হচ্ছে।
আনার কন্যা বলেন, তাদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়, সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো তদবিরের চাপে পড়ে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে বন্ধ করার চেষ্টা না করা হয়, চাপের মুখে যাতে সঠিক তদন্ত বন্ধ করা না হয়, সেই দাবি জানিয়েছি। আমি যেন সঠিক বিচার পাই। সেটাই বলেছি।
আনারের মেয়ে আরও বলেন, গিয়াস বাবু নামে যাকে আটক করা হয়েছে, তিনি বাবার প্রতিপক্ষ না। আমাদের সঙ্গে তার কোনো শত্রুতাও নেই। আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে। গত মাসের ১৭ তারিখে তার সঙ্গে ভাঙায় দেখা হয়েছে। সেখানে একটা টাকা দেওয়ার লেনদেনের কথা উঠেছে, যা আমি খবরে শুনেছি। আমার কথা হলো, এ টাকার যোগানদাতা কে? কেন তারা এটা করিয়েছি? আপনারা দেখেছেন, তাকে আটকের আগে থানায় তিনি জিডি করেছেন যে, তার তিনটি ফোন হারিয়ে গেছে।
একই দিনে একজন মানুষের তিনটি ফোন কীভাবে হারিয়ে যায়, সেটাও আমার প্রশ্ন। এগুলো কী পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, সে তো আমার বাবার শত্রু না। এই কাজগুলো কে করাচ্ছে, সেটা আমি বারবার বলেছি।
তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে। অবশ্যই তাদের কাছে সত্যিকারের কোনো তথ্যপ্রমাণ আছে, সেটা আমি নিজেও জানি। সেই প্রমাণের সাপেক্ষেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসলে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে যাতে আমার বাবার হত্যার বিচার করা হয়, আমি সেই দাবি জানিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন এমপি আজিম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন