আনার হত্যার তদন্তে ভারতীয় গোয়েন্দা দল ঢাকায়
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/05/IMG_20240524_000055-900x450.jpg)
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চার সদস্যের দল ঢাকায় পৌঁছেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ (ডিবি) বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে বেইলি রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা বিকালে আমাদের সাথে বসবেন। আমরা যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি, প্রয়োজনে তাদের সাথেও কথা বলবেন ভারতীয় গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা।”
গ্রেপ্তার ওই তিনজন হলেন- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তাদের আটক করে বাংলাদেশের পুলিশ।
আনারের মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন, তাতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই তিনজনকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা হারুন।
ভারতীয় গোয়েন্দারা যে তদন্তের কাজে বাংলাদেশে আসছেন, সে কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এর আগে জানিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রায় সব কিছু চিহ্নিত হয়েছে। কারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। এখন শুধু ঘোষণার বাকি।”
দুই দেশের গোয়েন্দারা একমত হতে পারলে সেই ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখনো তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে ভারতের একটি টিম এখানে (বাংলাদেশে) আসবে। প্রয়োজনে আমাদের একটি টিমও সেখানে (ভারত) যাবে।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পরে বলেন, আনারকে কলকাতার ওই বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। তবে তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি।
বুধবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে খুনিরা বাংলাদেশের বলে তারা জানতে পেরেছেন।
আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এজাহারে বলা হয়েছে, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সংসদ সদস্য ভবন এলাকার ৫ নম্বর ভবনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনার সপরিবারে থাকতেন, ৯ মে বিকালে সেখান থেকে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ১১ মে বিকালে ভিডিও কলে কথা হয় মেয়ে ডরিনের সঙ্গে, তখন বাবার কথাবার্তা তার কাছে অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল।
পরে বারবার ফোন দিয়েও আর বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী ডরিন।
“১৩ মে তার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামা নামে এক আত্মীয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ আসে, যার ভাষা ছিল এমন- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে।’ আমি অমিত শাহর কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।”
পরে আরও মেসেজ আসে, যা তার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা পাঠিয়ে থাকতে পারে বাদীর অভিযোগ।
এজাহারে বলা হয়, খোঁজ-খবর করে কোথাও না পেয়ে কলকাতায় গোপাল বিশ্বাস নামে এমপি আনারের এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দিয়ে ১৮ মে বারানগর থানায় জিডি করান বাদীর পরিবার। পরে তারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারেন, তাকে ‘অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপহরণ’ করেছে।
এদিকে কলকাতায় সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে আনার খুন হয়েছেন, সেই বাসা ঘুরে দেখে বুধবার বিকাল কলকাতার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে যা তথ্য আছে তাতে এমপি আনোয়ারুলকে সর্বশেষ ১৩ মে এখানে ঢুকতে দেখা গেছে। এর আগে তিনি এখানে এসেছিলেন কিনা সেটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে তার লাশ উদ্ধার করা যায়নি।”
লাশ উদ্ধার না করে কীভাবে তাকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন জানতে চাইলে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “আমাদের কাছে ইনপুট আছে।”
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনারকে খুন করা হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দ্বীপ রায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
তবে আখতারুজ্জামান এখনো ধরা পড়েননি। ভারত থেকে নেপাল হয়ে এরইমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে খবর পেয়েছে ঢাকার পুলিশ।
বাংলাদেশে এ বিষয়ে তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই আখতারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে, এলাকায় তিনি শাহীন মিয়া নামে পরিচিত। তার ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান।
কলকাতার পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমগুলো লিখেছে, ১৩ মে নিউ টাউনের ওই বাসায় শ্বাসরোধে খুন করা হয় আনারকে। পরে টুকরো টুকরো করে কাটা হয় দেহ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিন দিন ধরে দেহের অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সেগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারাও সেরকম শুনেছেন। কলকাতা পুলিশ এসব বিষয়ে কাজ করছে।
আনন্দবাজার লিখেছে, সঞ্জীভা গার্ডেনসের সিসি ক্যামেরার ভিডিও খতিয়ে দেখার পর তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বরাহনগর থেকে একটি গাড়িতে চেপে নিউ টাউনের ওই বাড়িতে আবাসনে পৌঁছান আনার। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি সেই গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এছাড়া একটি রাইড শেয়ারের গাড়িও দেখা গেছে সিসি ক্যামেরায়, যে গাড়িতে করে সন্দেহজনক কয়েকজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেই গাড়ির চালককেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে খবর দিয়েছে আনন্দবাজার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন