আনোয়ার জাহিদের দেখানো পথে রাজনীতিতে সংস্কার প্রয়োজন: বাংলাদেশ ন্যাপ

‘রাজনীতি বার বার পথ হারায়। আজও রাজনীতি পথহারা। দুর্নীতি আর দুবৃর্ত্তানের কারণে রাজনীতি ক্রমান্বয়ে জনগনের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সুবিধাবাদি আর লুটেরারা এখনো রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করছে। গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে অপরাজনীতির পতন হয়েছে। এই পতনের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সযোগ সৃষ্টি এর মাঝেই আনোয়ার জাহিদের দেখানো পথে রাজনীতিতে সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।

সোমবার (১২ আগস্ট) মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর অনুসারী, ন্যাপ নেতা, প্রখ্যাত রাজনীতিক, প্রাজ্ঞ সাংবাদিক ও সাবেক মন্ত্রী জননেতা আনোয়ার জাহিদের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, উজান স্রোতের যাত্রী জননেতা আনোয়ার জাহিদও শেষ জীবনে শিকার হয়েছিলেন তথাকতিথ অসুস্থ ও ক্ষত রাজনীতির। সুস্থ ও মেধাভিত্তিক রাজনীতির এক ‌ ধ্রুবতারার নাম আনোয়ার জাহিদ। নীতিহীন রাজনীতির যুগে তিনি ছিলেন অনুস্মরণীয় ও অনুকরণীয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে ভদ্রভাষায়ও যে ভিন্নমত প্রকাশ করা যায় তার জলন্ত দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। যা আজকের রাজনীতিতে অনুপস্থিত প্রায়।

তারা বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া পরবর্তী জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থক নেতৃত্ব ছিলেন জননেতা আনোয়ার জাহিদ। যখন রাজনীতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আঙ্গুল উঠানো হয় তখন তাকে উপস্থিত করা যায় সততার দৃষ্টান্ত হিসাবে। নীতিহীন রাজনীতির যুগে তিনি সততা ও মেধাভিত্তিক রাজনীতির এক উজ্জল নক্ষত্র। কেউ শিকার করুক বা নাই করুক জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির মাঝে অকল্পনীয় যে ঐক্যের সূচনা হয়েছিল তার রুপকার ছিলেন তিনি। দু:খজনক হলেও সত্য সেই রুপকারকেই এক সময় ছিটকে ফেলে দিতে কুন্ঠিত হয়নি তারা।

সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেহাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে অর্ধ সাপ্তাহিক ধূমকেতুর সহকারী সম্পাদক, ১৯৫৯ সালে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক, ১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক, ১৯৬৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার সম্পাদক, ১৯৬৬ সালে ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডের উপসম্পাদক, ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক গণবাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, ১৯৭২ সালে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি পিপলসের বার্তাসম্পাদক ও বাংলাদেশ টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ কাজ করেন দৈনিক ইনকিলাবে উপদেষ্টা সম্পাদক হিসাবে। তিনি ১৯৬২, ৬৩, ৬৪, সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজ) সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৫ ও ৬৬ সালে সহসভাপতি, ১৯৭৮ ও ৮৩ সালে সভাপতি হিসেবে দয়িত্ব পালন করেন।

আনোয়ার জাহিদ ছাত্রজীবনে নিখিল পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৬ ছাত্রলীগের ঝিনাইদহ মহকুমার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঝিনাইদহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে রাজশাহী সরকারী কলেজের ছাত্রসংসদের জি এস নির্বাচিত হন।

১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে কারামুক্ত হন। ১৯৬৫ সালে নিখিল-পাকিস্তান ন্যাপের কে›ন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থানে তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপ দুই ভাগে বিভক্ত হলে তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের যুগ্ম গ্নসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে ন্যাপ পূনর্গঠিত হলে তিনি কেন্দ্রীয় সদস্য হন।

১৯৭৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন ও ঘোষণাপত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। একই সাথে তিনি ন্যাপের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। পরে গণতন্ত্রী পার্টি গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন এরশাদ সরকারের তথ্য, ত্রাণ এবং শ্রম-জনশক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জানুয়ারি ১৯৮৮ সালে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন।

১৯৮৯ সালে তিনি এনডিপি এবং ১৯৯১ সালে বিএনডিপি গঠন করে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালের ১০ দলের সমন্বয়ে গঠিত এনডিএ’র সিক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপার্সনেরর তথ্য উপদেষ্ঠা ছিলেন।

১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল সকাল ১১ টায় মীরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।