‘আপন জুয়েলার্সের দেয়া তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই’

সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম হীরার ব্যাপারে আপন জুয়েলার্স যে তথ্য দিয়েছে এর কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সফিউর রহমান। তারা এই তথ্যে সন্তুষ্ট নন বলেও জানান।

মঙ্গলবার বিকালে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।

সফিউর রহমান বলেন, ‘আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণ আটকের পর দ্বিতীয় দফায় আপনের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ, আজদা আহমেদ এবং তিনজন আইনজীবী আমাদের কার্যালয়ে আসেন। তাদের আটককৃত সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণের মধ্যে প্রায় ১২৫ কেজি স্বর্ণের ব্যাপারে তথ্য দলিলাদি দাখিল করেছেন। ওই তথ্য ও দলিলাদি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ব্যাগেজ রুলে আনা বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছ থেকে তারা ওই স্বর্ণ কিনেছেন।’
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক বলেন, ‘আপন জুয়েলার্স যেসব ব্যক্তির কাছ থেকে স্বর্ণের বার কিনেছিলেন তার কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এছাড়াও যারা ওই স্বর্ণ বিদেশ থেকে কিনে আপন জুয়েলার্সের কাছে বিক্রি করেছিলেন তারা কি ওই স্বর্ণ বিদেশ থেকে আনার সময় সরকারকে নিয়মানুযায়ী ভ্যাট ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন কি না সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য সরবরাহ করেননি।’

মোহাম্মদ সফিউর রহমান বলেন, ‘ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বিদেশ থেকে দুই গ্রাম স্বর্ণ আনতে পারেন সরকারকে প্রতিভরি তিন হাজার টাকা ভ্যাট দিয়ে। কিন্তু তিনি ওই স্বর্ণ নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারবেন না।’

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক বলেন, ‘আপন জুয়েলার্সের সময়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু আমরা ১৪ মে তাদের স্বর্ণ আটক করেছিলাম। আটক আইনে আটককৃত পণ্যের ব্যাপারে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হয়। যেহেতু আপন জুয়েলার্স দুই থেকে তিন বার সময় নিয়ে কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেনি অথবা ওই স্বর্ণের ব্যাপারে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তাই তাদেরকে আর সময় দেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। তবুও বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক বলেন, ‘আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণালঙ্কার নিয়মানুযায়ী আটক করে ঢাকা কাস্টমস হাউজে জমা দেয়া হবে এবং এ বিষয়ে মামলা হবে। তারপরেও যদি কেউ মালিকানা দাবি করে তবে যথাপোযুক্ত প্রমাণ দিয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউজ থেকে ওই স্বর্ণ ফেরত আনতে পারবেন।’

এর আগে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে জব্দ করা সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম হীরার ব্যাখ্যা দিতে বেলা পৌনে ১২টার দিকে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে আসেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম। এর আগে এসব স্বর্ণের ব্যাখ্যা দিতে দিলদার আহমেদকে তিন দফা তলব করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়। এ সময়ে তার সঙ্গে আসেন দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ, তিন আইনজীবী তাইফুল সিরাজ, আখতার ফাহাদ জামান, মো. নাঈম উদ্দিন লিংকন।

সম্প্রতি আপন জুয়েলার্স আলোচনায় এসেছে এর মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর। গত ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় করা একটি মামলায় দুই তরুণী অভিযোগ করেন, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে তাদের ধর্ষণ করেন সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। এ ঘটনায় এই দুই জনসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে বনানী থানায় একটি মামলা করেন ধর্ষণের শিকার এক তরুণী। মামলার অন্য তিন আাসামি হলেন সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহতম আলী। আসামিদের সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এরপর আপনের মালিকের সম্পদ অনুসন্ধানে গত ১৪ ও ১৫ মে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দারা। এ সময় জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও হীরা। আপনের দাবি, এসব স্বর্ণ ও হীরার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে তাদের।

গত ১৭ মে শুল্ক গোয়েন্দাদের তলবে হাজির হয়ে আপনের মালিক দিলদার আহমেদ সব নথিপত্র জমা দিতে সময় চান। এরপর তাকে এক সপ্তাহ সময় দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। নির্ধারিত দিন ২৩ মে আপনের মালিকপক্ষ ব্যাখ্যা দিতে আসেনি শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে। কিন্তু সেদিন স্বপ্রণোদিত হয়েই আপনকে দুই দিনের সময় দেয় শুল্ক গোয়েন্দারা।

এরপর গত বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন হাজির হননি আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষ। এরপর এসব স্বর্ণের ব্যাখা দেয়ার জন্য আজ আবার তাদের তলব করা হয়।