জামিন পেলেও খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না যে কারণে
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ আপিল বিভাগ সর্বসম্মত হয়ে বহাল রাখলেও কারাগারে থাকা অবস্থায় অন্তত আরো ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ ব্যাপারে বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) দায়ের করা আপিলটি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার আদেশ দিয়েছেন। এই আপিল শুনানির ব্যাপারে এখন আমরা প্রস্তুতি নেব।’
‘একজনের বিরুদ্ধে যদি পাঁচটি মামলা থাকে, একটি মামলায় জামিন পেলেও অন্যান্য মামলায় জামিন না পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে জেলেই থাকতে হবে,’ যোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আদেশের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আপিলের আদেশের পরও খালেদা জিয়ার মুক্তি পেতে কিছুটা বিলম্ব হবে। কারণ, সরকার নানা কৌশলে তাঁর মুক্তি বিলম্বিত করার চেষ্টা করবে। নিম্ন আদালতে কতগুলো মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। সেই মামলাগুলোতে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
‘আমাদের সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করব এগুলো দ্রুত করার। আপিল বিভাগ যেহেতু এ মামলায় জামিন বহাল রেখেছেন। তাই আমার বিশ্বাস, অন্যান্য মামলায়ও তিনি জামিন পেয়ে শিগগির আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কুমিল্লায় তিনটি মামলা, ঢাকায় দুটি মামলা এবং নড়াইলে একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলা ভিত্তিহীন। শুধু তাঁকে আটকে রাখার জন্যই এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।’
পরে আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনও প্রায় একই কথা বলেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার মতো একটি বড় মামলায় যেহেতু খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রয়েছে, ফলে অন্যান্য মামলায়ও তিনি সহজেই জামিন নিয়ে মুক্তি পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মাহবুব হোসেন।
খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরোধিতা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ উভয়েই আপিল করেছিল। আপিল বিভাগ দুটি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত। এ মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা জরিমানাও করা হয়।
পরে ১২ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
১৪ মার্চ খালেদা জিয়ার হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত করে লিভ টু আপিল দায়েরের জন্য দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ১৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন।
গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকার, দুদক ও আসামিপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে এ আদেশ দেওয়া হয়।
গত ৮ ও ৯ মে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য গতকাল মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ গতকালও শুনানি করেন। পরে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন