আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে বড় জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোমিনুল হকের জোড়া সেঞ্চুরিতে বড় জয়ের স্বপ্ন দেখছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

একমাত্র টেস্ট সিরিজ জয়ের জন্য আফগানিস্তানকে ৬৬২ রানের পাহাড় সমান টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে তৃতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ৪৫ রান করেছে আফগানিস্তান। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে এখনও ৬১৮ রান করতে হবে আফগানদের। টেস্টে সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের বিশ্ব রেকর্ড আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এ ম্যাচ জিতলে নতুন ইতিহাস গড়বে আফগানরা।

নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রতিপক্ষকে সর্বোচ্চ রানের টার্গেট দিলো বাংলাদেশের। এর আগে ২০২১ সালে হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ৪৭৭ রানের টার্গেট দিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে ২৫৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ২২০ রানে ম্যাচটি জিতেছিলো বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ১৩৪ রান করেছিলো বাংলাদেশ। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৭০ রানে এগিয়ে ছিলো টাইগাররা। জাকির হাসান ও শান্ত সমান ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।

শুক্রবার (১৬ জুন) তৃতীয় দিন নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি জাকির। ব্যক্তিগত ৭১ রানে রান আউট হন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সাথে ১৯৯ বলে ১৭৩ রান যোগ করেন জাকির।

জাকির ফেরার ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন মোমিনুল হক। আফগানিস্তান বোলারদের বিপক্ষে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করতে থাকেন তারা। এতে প্রথম সেশনেই টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত। ১১৫ বলে ১৪টি চারে সেঞ্চুরি করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ১৪৬ রান করেছিলেন তিনি। মোমিনুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন শান্ত। এর আগে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন মোমিনুল।

দ্বিতীয় সেশনে বাঁ-হাতি স্পিনার জহির খানের বলে আউট হওয়ার আগে শান্ত ১৫টি চারে ১৫১ বলে ১২৪ রান।
৫৪তম ওভারের প্রথম বলে শান্তর বিদায়ে উইকেটে এসেই ১টি ছক্কায় ৮ রান তুলে ফেলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ওভারের চতুর্থ বলে জহিরের দ্বিতীয় শিকার হন মুশফিক। ৮ রান করেন তিনি।

চার বলের ব্যবধানে শান্ত-মুশফিকের বিদায়ে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু মোমিনুলের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে চিন্তা মুক্ত করেন অধিনায়ক লিটন দাস। আফগানিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে ওয়ানডে স্টাইলে খেলতে থাকেন লিটন ও মোমিনুল। ৪ উইকেটে ৩৭৮ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। এসময় ৯৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মোমিনুল।

বিরতি পর ৭৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি দিয়ে ২৬ ইনিংস পর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মোমিনুল। ১২৩ বলে ১২টি চারে তিন অংকে পা রাখেন তিনি। ২০২১ সালের এপ্রিলে সর্বশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন মোমিনুল।

মোমিনুলের শতকের আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন লিটন। শেষ পর্যন্ত ৮০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪২৫ রানে ইনিংস ঘোষনা করে বাংলাদেশ। ওভারপ্রতি ৫ দশমিক ৩১ করে রান ছিলো টাইগারদের।

১২টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ১২১ রান করেন মোমিনুল। ৮টি চারে ৮১ বলে অপরাজিত ৬৬ রান করেন লিটন। পঞ্চম উইকেটে ১৬০ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৪৩ রান করেন লিটন-মোমিনুল জুটি। আফগানিস্তানের জহির ২টি ও হামজা ১টি উইকেট নেন।

দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষনা করে আফগানিস্তানকে জয়ের জন্য ৬৬২ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। জবাবে খেলতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ইব্রাহিম জাদরানকে লেগ বিফোর আউট করেন বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
পরের ওভারে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ৫ রান করে তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ওপেনার আব্দুল মালিক। ৭ রানে ২ উইকেট পতনের ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। ষষ্ঠ ওভারে ১৩ রানে আহত অবসর নেন শাহিদি।

এরপর রহমত ও নাসির জামাল জুটি বাঁধেন। ১১তম ওভারের পর আলো স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে গেলে সেখানেই দিনের খেলার ইতি ঘটে। রহমত ১০ ও জামাল ৫ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের তাসকিন ও শরিফুল ১টি করে উইকেট নেন।