আবদুল হাই ইদ্রিছী’র ছড়াগুচ্ছ
বিমান পুড়ে ছাই
আবদুল হাই ইদ্রিছী
বাংলাদেশের যাত্রীবাহী
একটি বিমান ওড়ে,
নেপালের আকাশে যেয়ে
সেই বিমানটি পোড়ে।
কাঠমুন্ডুর ঐ ত্রিভুবনটা
লক্ষ্য নিয়ে ছুটে,
গন্তব্যতে পৌঁছে বিমান
নামার আগে টুটে।
আবাল বৃদ্ধ শিশু কত
যাত্রী ছিলো তাতে,
পর্যটক বর- বধূ ছিলো
বিয়ের রঙটা হাতে।
রুয়েটের শিক্ষিকা ছিলেন
স্বামী নিয়ে সাথে,
মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রী
উড়ে ছিলো তাতে।
চোখে তাদের স্বপ্ন ছিলো
বুকে ছিলো আশা,
অপেক্ষাতে রয়েছিলো
পৌঁছবে কখন বাসা।
জানতো কি রে নিয়তি যে
ফেলবে মরণ ফাঁদে,
কিন্তু সবাই কয়লা হলো
দুনিয়াটা কাঁদে।
মরণ কোথায় করবে বরণ
ধরবে এসে কাকে,
হিসাবটা কি আল্লাহ্ ছাড়া
অন্য কেহ রাখে।
তাই তো সবাই প্রস্তুতিটা
সদা রাখতে হবে,
মরণ যদি আসেও তবু-
জীবন ধন্য তবে।
***
হালচাল
আবদুল হাই ইদ্রিছী
স্বাধীনচেতা সোনার দেশের
হইছে কেমন হাল,
নির্বাচনের গরম হাওয়ায়
এই আঠারো সাল।
রাস্তা ঘাটে হাট বাজারে
পুলিশের-ই পাল,
আম জনতা হারিয়েছে
মনের ছন্দ তাল।
খবর আসে হেথায় সেথায়
যাচ্ছে পাওয়া লাশ,
আতঙ্কেতে থাকছে মানুষ
মাসের পরে মাস।
গুমের সারি হচ্ছে ভারি
যাচ্ছে যত দিন,
চারিদিকে হা-হুতাশ আর
বাজছে শোকের বীণ।
আদালতের বারান্দাটা
থাকছে গরম রোজ,
দিচ্ছে সেথায় বিচারকরা
হরেক রকম ডোজ।
পরীক্ষাটা শুরু হলেই
প্রশ্নপত্র ফাঁস,
মানুষ গড়ার আঙিনাতে
দুর্নীতি হয় চাষ।
চুক্তি নিয়ে উঠতে দেখি
হর-হামেশা ঝড়,
নদীর বুকে দেখছি তবু
নিত্য নতুন চর।
দ্রব্যমূল্যে বাজার গরম
সিন্ডিকেটে সব,
চাঁদাবাজি হয়ে গেছে
এখন দারুণ জব।
আগের মত চন্দ্র ওঠে
সূর্য ওঠে ঠিক,
সম্প্রীতি আর ন্যায় নীতি
পাই না কোন দিক।
***
রক্ত ভাসে সিরিয়া
আবদুল হাই ইদ্রিছী
রক্ত ভাসে সিরিয়াতে
গৌতা ভরছে লাশে,
মরছে ওরা পাখির মত
নেই তো কেহ পাশে।
বিশ্ববাসী দেখছে শুধু
অবাক চোখে চেয়ে,
পড়ছে শুধু চোখের পানি
গাল দু’খানা বেয়ে।
কুটছে মাথা মানবতার
ঐ হারামীর পালে,
মানুষ মেরে উল্লাসেতে
নাচছে তালে তালে।
কোথায় এখন বিশ্ব বিবেক
মানবতার চাষী!
বেঁচে থেকে কি লাভ তোদের
গলায় লাগা ফাঁসি।
নইলে গিয়ে জলদি থামা
গৌতার এসব খুনী!
বিশ্ববাসী বলবে তখন
তোরা অনেক গুণী।
***
স্বাধীনচেতা বউ
আবদুল হাই ইদ্রিছী
অনেক দিন কাটিয়ে দিলাম
কন্যা চেয়ে চেয়ে,
পরিশেষে করছি বিয়ে
এক বাপের এক মেয়ে।
রঙে-রূপে মাশা’আল্লাহ্
কিন্তু স্বাধীনচেতা,
আমি হলাম কর্মি তাহার
সে হলো ভাই নেতা।
চলা-ফেরা পচন্দ তার
দাঁড়ি-কমা ছাড়া,
রাগ করে সে চলার পথে
বলি যদি, দাঁড়া।
ঠোঁটে দিয়ে লিপিস্টিক আর
আলতা -পালিশ গালে,
ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়ায়
মনের তালে তালে।
বাতাসেতে চুল উড়িয়ে
বন্ধুদেরে নিয়ে,
যখন তখন আড্ডা মারে
পার্কে মাঠে গিয়ে।
আমার কথা কোনো ভাবে
বুঝাতে না পারি
বারণ করতে গেলে আবার
জোরে মারে ঝাড়ি।
হর-হামেশা অনেক কথা
শুনায় আমায় লোকে,
কখনো তার চলা-ফেরা
দেখি নিজের চোখে।
হঠাৎ সে দিন বলে আমায়-
বলছে যেতে মাসি,
বাসায় তুমি শুয়ে থাকো
আমি একটু আসি!
সেই যে গেলো পাই না খবর
ধরে না আর ফোনে,
দিনটা গেলো রাতে হঠাৎ
ফোন করে তার বোনে!
আপ্পি না কি হাসপাতালের
ইমারজেন্সি রুমে,
একটি লোকে ফোন দিয়ে কয়
আমি ছিলাম ঘুমে!
বাসার গেটে তালা দিয়ে
হাসপাতালে যেয়ে,
আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ে
তার দিকেতে চেয়ে।
উস্কু-খুস্কু আউলা চুলে
স্যালাইন গাঁথা হাতে,
যাচ্ছিলো না চেনা তাকে
নেই কেহ তার সাথে।
তখন তাহার জ্ঞান ছিলো না
দাঁড়িয়ে থাকি পাশে,
চোখের পানি ঝরতে দেখি
জ্ঞানটা যখন আসে।
যাত্রা পথে বন্ধু আমায়
এ সব কথা বলে,
এতক্ষণে ট্রেনটা আসে
গন্তব্যতে চলে।
***
ঋতুরাজ
আবদুল হাই ইদ্রিছী
নাই বা ফুটুক কৃষ্ণচূড়া
নয়ন তারা ফুল,
ঋতুরাজের জন্ম যে আজ
নেই কো তাতে ভুল।
নাই বা ধরুক ফুলের ভ্রমর
গুনগুনিয়ে গান,
ভোরের পাখির কিচির মিচির
নাইবা শুনুক কান।
নাইবা ডাকুক অন্তরালে
কোকিল মধুর ডাক,
আমের মুকুল মৌমাছিতে
নাইবা ভরে থাক।
বসন্তের-ই গন্ধ তবু
মনটা ছুঁয়ে যায়,
প্রকৃতিতে ডুবে যেতে
মনটা আমার চায়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন