আবাদী জমি শিল্পায়নের জন্য ব্যবহার করা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী
কোন আবাদি জমি, যা সারা বছর তিন ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়, শিল্পায়নের জন্য ব্যবহার করা যাবে না বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং আবাসনের কারণে বিপুল পরিমাণ উর্বর আবাদি জমি হারিয়ে গেছে, কারণ, পূর্ববর্তী সরকারগুলো এতে মনোযোগ দেয়নি। আমরা এই ধরনের জমি আর হারাতে চাই না এবং সে কারণেই আমরা এটি সংরক্ষণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমআরএইউ), গাজীপুরের ২৫তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবং প্রযুক্তি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএসএমআরএইউ-এর বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
আরো বক্তব্য রাখেন বিএসএমআরইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।
সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিএসএমআরএইউ বাংলাদেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত। এটি ১৯৯৮ সালে সরকার প্রবর্তিত একটি আইনের মাধ্যমে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে (’৯৬ পূর্ববর্তী বিএনপি শাসনামলে) দানাদার শস্য মাত্র ১ কোটি ৬৯ লাখ মেট্রিক টনের মত উৎপন্ন হোত সেখানে বর্তমানে ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টনের মত চালসহ দানাদার শস্য উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এটা কিন্তু গবেষণার ফসল। গবেষণা করেই আমরা এটা করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ খুবই ছোট একটি দেশ কিন্তু মানুষের বিপুল সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য উৎপাদন নিরাপদ করতে আমাদের বিদ্যমান আবাদি জমি রক্ষা করতে হবে।’
পাশাপাশি তিনি বিজ্ঞানীদের গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে গবেষণালব্ধ মেধাস্বত্ত (ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট) যেন সঠিক উপায়ে সংরক্ষিত হয় তা নিশ্চিত করার এবং তাঁর সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলায় তাঁর আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, এখানে অনেক বাধাও এসেছে, অনেক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই সাফল্য দেখাতে পারছি বলেই আমাদের কখনও খাদ্য ঘাটতি হয়নি। তারপরেও আমাদের বন্যা হয়, খরা হয় নদী ভাঙ্গন হয়, ঝড় হয়, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও অনেক সময় ফসল উৎপাদন ব্যহত হয়। কাজেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করেই আমরা ফসল উৎপাদনের বহুমুখীকরণকে কাজে লাগাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার গোঁপালগঞ্জ জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর কচুরিপানা হয়। সেগুলোকে বেধে মাচা করে ভাসমান চাষ পদ্ধতি এখন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কেননা আমাদের জমির স্বল্পতা আছে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই ব্যবস্থাটা নেয়া হয়েছে।
তিনি দেশে ভোজ্য তেল উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের সরিষার তেল যেটা উৎপাদন হয় সেটাকে আমরা গবেষণা করে দেখেছি রিফাইন করে আরো হালকা ও উন্নতমানের করা যায়। বাদাম তেল, তিষি থেকে শুরু করে চালের কুড়া বা তুষ থেকেও তেল উৎপাদন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৮ শতাংশ ভোজ্য তেল আমাদের বাইরে থেকে রপ্তানী করতে হয়, সেটা আমরা কেন করবো ? কাজেই আমাদের তিল, তিষি ও বাদাম থেকে তেল উৎপাদনে আরো বেশি গবেষণা হওয়া দরকার এবং সেজন্য আপনাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি ইতোমধ্যে গবেষণার মাধ্যমে অনেক উন্নত মানের বীজ ও
তাঁর সরকার কৃষি সম্প্রসারণে গবেষণার জন্য উচ্চশিক্ষারও ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সহায়তা একটা ট্রাস্ট ফান্ড করা হয়েছে সেখান থেকে আমরা উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতা করি। আর আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও গবেষণার জন্য ভাল একটা সহযোগিতা দেওয়া হয়। কাজেই এদিকে সকলকে আরো দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৃষি আগে ছিল আমাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। এখন কিন্তু কৃষি সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। কৃষি এখন অর্থকরী ফসল। কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়, সেই রপ্তানি বাড়াতে ও কৃষির বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে অনেক উচ্চ ফলনশীল বীজ ও ফসলের জাত আবিস্কার করেছে যেটা দেশের জন্য যথেষ্ট কাজে লাগে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,“কৃষির বিভিন্ন শাখায় দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির পাশপাশি আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি উন্নত মানের গবেষণার মাধ্যমে ফসলের নতুন নতুন জাত আপনারা উদ্ভাবন করেছেন।”
তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় সবথেকে বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে এবং অনেক উন্নত জাতের বা অধিক ফলনশীল ধান, বীজ, তৈল বীজ, সবজি, ফলমূল এবং বিভিন্ন ফসলের প্রায় ৬৭টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে গবেষণা করে ১২ মাসী কাঁঠালের জিনোম সিকোয়েন্স (জন্ম রহস্য উন্মোচন) আবিস্কার করায় তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এর মেধাস্বত্ত সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর তাঁর সরকার পাটের উপর গবেষণা করে এর জেনোম সিকোয়েন্সিং করে এবং এর মেধাস্বত্তটাও কিন্তু বাংলাদেশের। ফলে, পাটের বহুমুখীকরণ সম্ভব হচ্ছে।
গাজীপুর কাঠালের জন্য বিখ্যাত উল্লেখ করে তিনি কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের কথা জানান এবং মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁচা কাঁঠালকে তরকারি হিসেবে খাওয়ার উদাহারণ দেন।
তিনি বলেন, আমাদের এখন অনেকেই ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেছে মাছ খায় কিন্তু মাংস খায় না। তাদের জন্য বিকল্প কাঁঠাল।
তিনি বলেন, কাঁচা কাঁঠালের বার্গার ও কাবাব হয়। অনেক উন্নত দেশও বিকল্প খাদ্য তালিকায় কাঁঠালকে স্থান দিয়েছে, কাঁচা কাঁঠালের বার্গার মাংসের বার্গার বা রোলের চেয়ে দাম বেশি। এ ফলটির কিছু ফেলনা নয়। সবকিছুই কাজে লাগানো যায়।
গৃহপালিত পশু পালন করলেও পশু পাখির চিকিৎসা, তাদের আচার আচরণের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া বা তাদেরকে যতœ দেওয়ার মতো বাংলাদেশে তেমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই বলে জানান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি উৎপাদনে জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে করোনা ভাইরাস মহামারীর পর বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেয়া নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্য পণ্যের দাম, বিদ্যুৎ,পরিবহন, জ্বালানি, পরিবহন খরচসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন