আমদানি-রফতানি কমলেও বেনাপোলে রাজস্ব আয় ও রফতানি মূল্যে ঊর্ধ্বগতি

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমে গেছে। তবে আমদানি কমলেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে বেনাপোল বন্দরে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এই সময়ে আগের বছরের তুলনায় বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন। তবে আমদানি কমলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮ দশমিক ৬১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) ৮ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন। তবে পণ্য আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮দশমিক৬১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রফতানি পণ্যের পরিমাণ বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রফতানি পণ্যের মূল্য ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বন্দরে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ, কেমিকেলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, টিস্যু পেপার, মেলামাইন ও মাছ উল্লেখযোগ্য। দেশের মোট ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬টি বন্দরের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে ভারত থেকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ মেট্রিক টন পণ্য রফতানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে মোট ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১ মেট্রিক টন পণ্য রফতানি হয়েছিল। যা গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ২০ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন পণ্য কম রফতানি হয়েছে। তবে রফতানি কম হলেও রফতানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে ভারত থেকে মোট ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে মোট ১১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৭ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। যা গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন কম আমদানি হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ,এম শরিফুল হাসান বলেন, পণ্য আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮ দশমিক ৬১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সেই আলোকে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৫৩দশমিক৩১ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৬৬১ দশমিক ৯২ কোটি টাকা। যার মধ্যে জুলাই মাসে ৪১৩ দশমিক ২২ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ৪০১ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৮৯ দশমিক ১১ কোটি টাকা, অক্টোবর মাসে ৫২৪ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ৬১৪ দশমিক ৭১ কোটি টাকা, ডিসেম্বর মাসে ৭৭৮ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা, জানুয়ারি মাসে ৬২১ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৮১৮ দশমিক ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

বেনাপোল বন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ্জ্ব মহসিন মিলন জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেমন কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল এবং স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন। এর ফলে বাণিজ্যে গতি ফিরেছে এবং হয়রানি কমেছে। তিনি আরও বলেন, পূর্বে ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যা ছিল, তবে বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় আমদানিকারকদের আর এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ বলেন, দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ভারত থেকে আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় অধিকাংশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করছে। তবে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি রাজস্ব ফাঁকি রোধে অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদ আলী জানান, বেনাপোল বন্দরে মালামাল লোড-আনলোড কাজে পর্যাপ্ত ক্রেন ও ফর্কলিফ্ট না থাকলেও ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাসে কাজ করছে বন্দর শ্রমিকরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে বেনাপোল স্থলবন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়েছে। ৭ দিন সার্বক্ষণিক পণ্য লোড-আনলোড ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়া, নতুন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে, যা বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. কামরুজ্জামান ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “বৈধ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, বেনাপোল কাস্টম হাউসের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮.৬১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে, যা ১৩.১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। রফতানি পণ্যের পরিমাণ ৬.৮৯ শতাংশ কমলেও, রফতানি পণ্যের মূল্য ২৮.৭ শতাংশ বেড়েছে।”