আমরা কি আদালতে বসে মন্তব্য করতে পারব না : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আপনারা প্রধান বিচারপতি ও আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা কি কিছুই বলতে পারব না। আমরা কি আদালতে বসে মন্তব্য করতে পারব না।
মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় আরও দুই সপ্তাহ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। এর আগে দুই দফা স্থগিত করে আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এজলাসে বসে কথা বলার বিষয়ে কিছু কিছু মন্ত্রী মন্তব্য করেন। এটা কি ফেয়ার? আপনাকে প্রশ্ন করছি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দুই দিক থেকে বক্তব্য আসে। বক্তব্য মিডিয়া লুফে নেয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কেন এ কথা বলছেন? বিচারে আমরা রাজনৈতিক মন্তব্য দেই না। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বক্তব্য দেই। বিচার বিভাগে যখন যে ইস্যু চলে আসে। যেমন, আজকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্পর্কে। না বললে কি থাকলো। মাসদার হোসেন মামলা, আমরা রাজনৈতিক কথা বলছি না।’
এসময় বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, ‘শৃঙ্খলাবিধির খসড়ায় গেজেট প্রকাশের বিষয়টি আমরা সুপ্রিম কোর্টের কথা অনুসারে বলেছিলাম। কিন্তু আপনারা সেখানে সরকারের কথা বলেছেন।’
এসকে সিনহা বলেন, ‘রাজনৈতিক কথা বলছি না। কিছু কিছু মন্ত্রী। মি. অ্যাটর্নি জেনারেল, আপনারা বিচারপতিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। পত্রিকায় এসেছে, একজন একজন বলেছেন। কোর্ট প্রসিডিংসে, আদালতের কার্যক্রমে যা হয়, তা নিয়ে সংসদ ও পাবলিকলি কথা বলার সুযোগ নেই।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ১১৬ অনুচ্ছেদ ও ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদ এ ব্যাখ্যা দিয়ে মাসদার হোসেন মামলার রায় হয়েছে। এখন যদি আপনার কাছ থেকে ব্যাখ্যা শুনতে হয়, তাহলে দুঃখজনক।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।
গত ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন-২০০৯ এর ১৪টি ধারা ও উপধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এছাড়া তিন রিটকারীর সাজা অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং জরিমানাও বাতিল করেছেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন-২০০৯ এর কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়।
জানা গেছে, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মো. মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনের বিধান ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন।
এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন